• ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১
logo

‘আমি মনে হয় আর বাঁচব না, শেষবার একটু জল দাও মা’

আরটিভি নিউজ

  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৮
সংগৃহীত ছবি

‘খুব কষ্ট হচ্ছে মা আমার। শরীর অবশ হয়ে আসছে, আমি মনে হয় আর বাঁচব না, মা। শেষবার একটু জল দাও মা।’

শনিবার (৩ আগস্ট) এভাবেই আজাহারি করে ছেলের শেষ কথাগুলো জানাচ্ছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের মুনুড়িয়া গ্রামের বিকাশ শীলের ছেলে শুভ শীলের (২৪) মা সাধনা শীল। গত ২০ জুলাই ঢাকার সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় গুলিতে আহত হন তিনে। এরপর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই ভোরে তার মৃত্যু হয়।

কাঁদতে কাঁদতে সাধনা শীল বলেন, ‘ঘটনার দিন ২০ জুলাই রাত ৮টার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাই আমরা। গিয়ে দেখি আমার বাচ্চাটা বেডে পড়ে কাতরাচ্ছে। কাইন্দা কাইন্দা কয়, মা, আমি আর বাঁচব না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে একটু জল চাইছিল বাচ্চাটা আমার কাছে। বলছিল, মা, আমাকে একটু জল দাও। খুব কষ্ট হচ্ছে মা আমার। শরীর অবশ হয়ে আসছে, আমি মনে হয় আর বাঁচব না, মা। শেষবার একটু জল দাও মা। আমি আমার বাচ্চাটার মুখে শেষবার এক ফোঁটা জলও দিতে পারিনি। ডাক্তারদের অনেক অনুরোধ করেছি। বোতল নিয়ে গেলেও ডাক্তাররা বলছিলেন অপারেশনের আগে জল দেওয়া যাবে না। সেই যে গেল অপারেশনের থিয়েটারে, আর আমার ছেলেটা ফিরল না!’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনীতির মধ্যে নেই, আন্দোলনের মধ্যে নেই। কলার ধরে টেনে নিয়ে আমার ছেলেকে গুলি করেছে। আমি আমার বুকের মানিকের হত্যার বিচার চাই।’

গত ২০ জুলাই ঢাকার সাভারে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জ্ঞান হারানোর আগে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে মায়ের নম্বরে ফোন করেন পোশাক শ্রমিক শুভ। তার বড় ভাই সোহাগ শীল সেই ফোন রিসিভ করলে তিনি জানান, গণ্ডগোলের মধ্যে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আটকা পড়েছিল। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে একটি মার্কেটে আশ্রয় নেয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মার্কেট থেকে বাইরে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলে এক পুলিশ সদস্য দেখে ফেলে। ওই পুলিশ কলার ধরে টেনে এনে রাস্তায় ফেলে শুভর পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। আমি তখন শুভকে বলি, যেভাবে পারিস আশপাশের লোকজনকে বলে হাসপাতালে যা, আমরা আসছি। এরপর শুভ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

জানা গেছে, পরিবারের সঙ্গে আশুলিয়ার জিরানি বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শুভ। পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। তার বাবা বিকাশ শীল জিরানি এলাকায় একটি সেলুনের দোকান চালান।ঘটনার আগের দিন ধামরাইয়ে মামার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন শুভ। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে সহিসংতার মধ্যে পড়ে যান। মৃত্যুর পর দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে যানবাহন না পেয়ে ঢাকাতেই সৎকার করা হয় শুভকে। ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। শুভর পরিবার জানায়, শুভ শীল আশুলিয়ার চক্রবর্তী এলাকার কেএসি ফ্যাশন লিমিটেডে সুইং অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। বড় ভাই সোহাগ শীলও শুভর সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানে কাটিং সেকশনে কর্মরত ছিলেন। ভাইয়ের সৎকারে পাঁচ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি হারিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, আরও ৫ জনের মৃত্যু
ঝিনাইদহে পুকুরে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, সাত দিনে ২৫ মৃত্যু
নোয়াখালীতে গণপিটুনি, হাসপাতালে চোরাকারবারির মৃত্যু