নওগাঁর পিপির বিরুদ্ধে বিচারকদের হুমকি ও আদালত অবমাননার অভিযোগ
নওগাঁ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাইদ মো. এ জে ড এম রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে বিচারকদের উদ্দেশ্য অশোভন বক্তব্য, হুমকি ও আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। ওই সরকারি আইন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নওগাঁ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল ইসলাম বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে নওগাঁ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আরও সাত বিচারক প্রতিস্বাক্ষর করেছেন।
এ ছাড়া বিচারকদের হুমকি ও আদালত অবমাননাকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে নওগাঁ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ জেড এম রফিকুল আলমকে ১০ দিনের মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কাউন্সিলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে গতকাল সোমবার (২ ডিসেম্বর) পাঠানো ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে গত ২৭ নভেম্বর নওগাঁ আদালত চত্বরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে পিপি এ জেড এম রফিকুল আলম বলেন, বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলব, জুডিসিয়ারি কিলিং, ন্যায়বিচারের পরিপন্থি আপনারা অনেক বিচার করেছেন। আমি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিসিয়াল সকল বিচারকদের উদ্দেশে বলব, আপনারা আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আমি এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি ও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদেরকে বলব, আপনারা আমার কথা লিপিবদ্ধ করবেন, সরকারকে জানাবেন। নওগাঁতে কিছু বিচারক আছেন, সেসব বিচারক আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীর ভাগ্নে-ভাইপো। বিচারকরা ভালো ব্যাখ্যা দেন। বদমায়েশী করার জায়গা পাননি? জনতা-ছাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে খুনি হাসিনা হিন্দুস্তানে পালিয়েছে। আপনাদের পালানোর জায়গা হবে না।
ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে বলব, যদি আপনাদেরকে ঘেরাও করে তার দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে। বাংলাদেশে চাকরি করবেন, আওয়ামী লীগের দালালি করবেন; চাকরি করতে দেব না, ঘেরাও করা হবে। আগামীতে যদি কোনো সন্ত্রাসী লীগের কোনো কর্মী, কোনো নেতা যে আদালতে সারেন্ডার দিবে, সেই আদালত ঘেরাও করা হবে। বিচারককে আমি নাম ধরে বলতে চাচ্ছি না, এখনও সাবধান হয়ে যান এবং আগামীতে এই রকম কর্মকাণ্ড যদি আপনারা অব্যাহত রাখেন, আপনাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতাসহ, আইনজীবীসহ আপনাদেরকে ঘেরাও করা হবে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পিপি রফিকুল আলম অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিচারকদের উদ্দেশ্যে অশোভন বক্তব্য, হুমকি ও আদালত অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার এ ধরনের বক্তব্যে বিচার বিভাগ ও বিচারকদের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি প্রবণতা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আদালত চত্বরে বিচারকদের নিয়ে একজন পিপির এ ধরনের বক্তব্য জনসাধারণের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেসি তথা বিচার বিভাগ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যা আদালত অবমাননার সামিল। ম্যাজিস্ট্রেটদের আদালত ঘেরাওয়ের হুমকিসহ আদালত অবমাননার বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে।
অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ জেড এম রফিকুল আলম বলেন, সেদিন সমাবেশে ওই বক্তব্য একজন আইনজীবী কিংবা পিপি হিসেবে দেয় নাই। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেদিন কথাগুলো বলেছি। ৮ আগস্টের পর ফ্যাসিজমের দোসর হত্যা, মানুষের ওপর অন্যায় জুলুমের অভিযোগে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু কিছু ম্যাজিস্ট্রেট আইন লঙ্ঘন করে ঢালাওভাবে তাদেরকে জামিন দিচ্ছেন। এতে করে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সেদিন বক্তব্যগুলো দিয়েছি। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা আদালতকে অবমাননা করে আমি বক্তব্য দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর অভিযোগ হয়েছে। সেখান থেকে তলব করা হলে, অবশ্যই আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরব।
আরটিভি/এফআই-টি
মন্তব্য করুন