অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ , ০৯:৪৮ এএম


অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা
ছবি: সংগৃহীত

শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে বাদ পড়া শিক্ষানবিশ ৩২১ জন এসআই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে চাকরি ফিরে পেতে আন্দোলন শুরু করেছেন। গত দুদিন ধরে তারা সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আর এ আন্দোলনে নেতৃত্ব রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, মামুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। দ্বিতীয় কমিটিতে তিনি ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর তৃতীয় কমিটি ঘোষণার আগে তিনি সভাপতি প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে লবিং করেছিলেন। তবে সেই কমিটিতে পদ না পেলেও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে পদ পান।

ছাত্রলীগ নেতা মামুন অব্যাহতি পাওয়া এসআই সদস্যদের পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা পালন করছেন। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি একাধিক মিডিয়ার সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আর্তনাদ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে ৩২১ জন পুলিশ বসে আছে ৩২১টা পরিবারকে না, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। একটা পুলিশ সদস্য কখন কাফনের কাপড় পড়ে। আপনারা সরকারের কাছে জবাবদিহি নেন। আমাদের কারো অপরাধ থাকলে তাকে জানায় দিয়ে বাকিদের চাকরিতে বহাল করেন। যা করে প্রকাশ্যে করেন।’

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মামুন ছাত্রলীগের পরিচয়ে নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে একাধিক অভিযোগ জমা হয়। যার বেশিরভাগই মারধর, চাঁদাবাজি, হলের সিট বাণিজ্য, মাদক সেবন।’

এ ছাড়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হুসাইন বিপুর সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল।

বিজ্ঞাপন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মামুন খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তার বাড়ি দিনাজপুরে হওয়ায় সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করতে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি কয়েকদিন পর পর ফেসবুকে পোস্ট করতেন।’

অভিযোগ আছে, মামুন পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ পেতে অসাধু উপায় অবলম্বন করেছেন। তাকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছিলেন পলাতক সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। চাকরি থেকে বাদ পড়ায় এসআইদের আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র-জনতা। মঙ্গলবার ছাত্রলীগ নেতা মামুনের একটি ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনে অধিকাংশই যে  ছাত্রলীগ কোটায় চাকরি পেয়েছে- এটা বলার অপেক্ষা থাকে না। তাদের মাঝে একদল ছিল পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে, যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এইটা একদম উপযুক্ত সিদ্ধান্ত রবলে আমরা মনে করি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের সিন্ডিকেট  ভাঙতে হবে। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে  অনশনের নামে পুনরায় ছাত্রলীগকে প্রশাসন পুনর্বহাল যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা থাকে না। অনশনের নামে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের এসব অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। স্বৈরাচারের দোসরদের কোনো স্থান প্রশাসনে হবে না। দোসরদের রুখে দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবো। তবু কোনো ছাড় নয়।’

এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ মামুনের মুঠোফোনে কল দিলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে ৪০তম (ক্যাডেট) সাব-ইন্সপেক্টর ২০২৩ ব্যাচের অব্যাহতি প্রাপ্তদের চাকরিতে পুনর্বহাল দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission