পবিত্র রমজানের কারণে এবার কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে দৌলপূর্ণিমার এবারের লালন স্মরণোৎসব শুধু আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবছর দৌল পূর্ণিমার তিথিতে জমকালো আয়োজনে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব হয়ে আসছেন। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত দর্শনার্থীরা আসত এখানে।
এবার আজকের দৌল পূর্ণিমার তিথি পবিত্র রমজানে হওয়ায় শুধু আলোচনা সভাতেই অনুষ্ঠান শেষ করবেন লালন একাডেমি। তবে একাডেমি থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে দুই দফায় লালন ভক্তদের সেবা দেওয়া হবে।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার বিকেলে লালন একাডেমি মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
এদিকে, প্রাণের সেই উৎসব না থাকায় আখড়াবাড়িতে সাধু ভক্তদের উপস্থিতি একেবারেই কম। দৌল পূর্ণিমার তিথি আসলে যেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না এবার সেখানে লালন ভক্ত অনুসারীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। বাউল মেলা, সংগীতানুষ্ঠান না থাকায় তেমন কোন দর্শনার্থীও নেই।
দু’শ বছর আগের কথা। নিজের ভক্ত বাউলদের খাটি করে গড়ে তুলতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়া বাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্ণিমা রাতে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছে তার ভক্ত ও অনুসারীরা। পরের উৎসবে একতারা দোতারা আর ঢোল বাঁশির সুরে ও আধ্যাত্মিক গানে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে লালন আখড়াবাড়ি, এমনটাই প্রত্যাশা লালন ভক্তদের।
লালন অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় উৎসব কাটছাঁট করা মেনে নিয়েছেন। তবে যেহেতু লালন ফকির নিজেই এই উৎসব করতেন। তাই সেই রীতি মেনে তারা সাধু সঙ্গ উৎসব পালন করবেন। আজ সন্ধ্যায় অধিবাস হবার পরে রাখাল, বাল্য ও নিজ উদ্যোগে পূর্ণ সেবা গ্রহণ করবেন তারা।
লালন একাডেমির সভাপতি তৌফিকুর রহমান বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লালন মেলা, সঙ্গীতানুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বল্প পরিসরে পালনের জন্য সাধু ভক্তরাও সহযোগীতা করছেন। আর কোন ধরনের মাদক সেবন, বেচা বিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। শুধু এবারের জন্য না আগামীতেও এই নির্দেশ বলবত থাকবে। আলোচনা সভার পর রাতে দুই দফায় সাধু ভক্তদের সেবা (খাবার) দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, লালন আখড়াবাড়িতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। যে কোন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। মাজারসহ সাধু ভক্তদের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসিটিভি স্থাপনসহ পুরো এলাকা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই, রাতে সেবা দেওয়া ছাড়াও সাধু ভক্তদের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশি পাহারার পাশাপাশি র্যাব ও সেনা সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন।
আরটিভি/এমএ