ঢাকাবুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

সড়কে সতর্ক সেনাবাহিনী-পুলিশ, ঈদযাত্রায় নেই ভোগান্তি  

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

রোববার, ৩০ মার্চ ২০২৫ , ০৫:০৭ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের বহুমুখী আগাম উদ্যোগের কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ময়মনসিংহের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে কোনো যানজট নেই। নেই যাত্রী ভোগান্তিও। ফলে প্রখর রৌদ্রের তীব্রতা মাড়িয়েই বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও সিএনজি, ভ্যানে করে ঈদ আমেজে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঘরমুখী কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাস, পাটগুদাম ব্রিজমোড়, মাসকান্দা, টাউন হলসহ নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

এতে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের চাপ রয়েছে যানবাহন ও সড়কগুলোতে। সেই সঙ্গে নগরীর অভ্যন্তরের ছোট সড়কগুলোতেও রিকশা, অটোবাইকসহ ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ রয়েছে ব্যাপক। তবে এই চাপ সামাল দিতে দিনরাত সড়কে উপস্থিত থেকে কাজ করছে জেলা ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ফলে চিরচেনা ভোগান্তির ঈদযাত্রায় এবার সড়ক পথে ভিন্ন রূপ দেখে খুশি সাধারণ মানুষও।        

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজমোড় হয়ে নেত্রকোণা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সাতটি উপজেলার মানুষ ঘরে ফেরেন। সেই সঙ্গে নগরীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গসহ অন্যান্য জেলার যাত্রীবাহী যানবাহন ছুটছে বেশ নির্বিঘ্নে।      

নগরীর দিঘারকান্দা বাইসপাস এলাকায় কথা হয় গাজীপুর থেকে আসা কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে। তারা ১২ জন মিলে একটি পিকআপ ভাড়া করে এসেছেন ময়মনসিংহে। তারা জানান, প্রতিবছর ঈদে যানজটের কারণে ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা বাইপাস ও পাটগুদাম ব্রিজমোড় পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকতে হতো। তবে এবার সেই চিত্র নেই। পথে পথে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কড়া নজরদারি করছে। ফলে সড়কে কোনো বাস এবং যাত্রীবাহী যান দাঁড়িয়ে নেই। এ কারণে পথে কোনো ভোগান্তি হয়নি।

পাটগুদাম ব্রিজমোড় এলাকায় কথা হয় শ্রীপুর থেকে আসা কর্মজীবী আরও কয়েক জনের সঙ্গে। তারাও এবারের ঈদযাত্রায় স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবার ঈদে বাড়ি ফেরার পথে যানজট থাকতো কিন্তু এবার তা নেই। পথে পথে গাড়ি আটকে মালিক সমিতি বা পরিবহন সমিতির নামে কেউ টাকা তুলছে না। এতে সড়ক পথে ভোগান্তি কমে গেছে।

বিজ্ঞাপন

মো. আরিফুল হক নামে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, মূলত পরিবহন, শ্রমিক-মালিকদের চাঁদাবাজির টাকা তোলার জন্য তারা সড়কের ওপড়ে গাড়ি আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করতো। আর এ কারণে ভোগান্তির শিকার হতো সাধারণ যাত্রীরা। তবে এবার এ ধরনের কোনো চিত্র নেই সড়কে। এতে প্রমাণ হয়েছে, প্রশাসনসহ শ্রমিক ও মালিকরা চাইলে সড়কে কোনো ভোগান্তি বা যানজট থাকা সম্ভব না।  

এ দিকে প্রখর রৌদ্রে পিকআপ ভ্যানসহ ছাদ খোলা যান ভাড়া করে ঘুরমুখী মানুষের স্রোত দেখা গেছে ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে। এতে কড়া রৌদ্রের তীব্রতায় ঈদযাত্রায় কষ্ট হলেও কম ভাড়ায় বাড়ি ফিরতে পেরে তাদের চোখেমুখে ছিল স্বস্তির ছাপ। যেন ঈদ উৎসবে বাড়ি ফেরায় তাদের এবার নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো।

নগরীর দিঘারকান্দা এলাকায় কর্মরত জেলা ট্রাফিক পুলিশের সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মেহেদী হাসান বলেন, এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা ছিল ভিন্নধর্মী। সড়কে নেই কোনো চাঁদাবাজি। সেই সঙ্গে কড়া সতর্কতায় মাঠে সক্রিয় থেকে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। সঙ্গে থেকে মাঠে স্বশরীরে কাজ করছেন জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারাও।  

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম বলেন, ময়মনসিংহ একটি পুরাতন শহর। দিনে দিনে এর জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বড় হয়নি রাস্তা। সেই সঙ্গে শহরটিতে ব্যবসায়িক পরিসর বেড়েছে, বেড়েছে যানবাহনও। ফলে এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রার বাড়তি চাপ সামাল দিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুটা আগেভাগেই পরিবহন মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে পূর্বপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর ফলেই ঈদের আগে ভাঙা সড়ক সংস্কার, কার্পেটিং, ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নগরীর দিগারকান্দাস্থ ঢাকা বাইপাস, শম্ভুগঞ্জ ও কেওয়াটখালী সড়ক ক্লিয়ার রাখতে অভিজ্ঞ ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমিসহ সব সিনিয়র কর্মকর্তারা দিনরাত মাঠে থেকে কাজ করছি। ফলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা করছি।      

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম বলেন, ঈদযাত্রার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেভাগেই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সড়ক বিভাজন, বন্ধ সড়কেও যান চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মতামতে যান নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সড়কের যেকোন বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে সক্রিয় থেকে কাজ করছে মোবাইল কোর্ট। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী, জেলা ও ট্রাফিক পুলিশ একযোগের সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করায় এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্মিলিত সহযোগিতায় এই কঠিন কাজটিতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। আশা করছি, এবারের নির্বিঘ্ন ও ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা মানুষকে স্বস্তি দেবে। 

আরটিভি/এমকে   

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |