ঢাকামঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেন সততার এক অনন্য উদাহরণ

বরগুনা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ , ০৪:৪৭ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম সততার এক অনন্য উদাহরণ। সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে চারপাশে নানাধরনের সমালোচনা শোনা যায়। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছেন—তারা নিঃশব্দে, নিরলসভাবে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এমনই একজন মানুষ মুহাম্মদ আশরাফুল আলম। তিনি সবার কাছে পরিচিত সততা, পেশাগত নিষ্ঠা ও নৈতিক দৃঢ়তার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাকে কাছ থেকে কাজ করতে দেখে সম্প্রতি মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি কিছু অভিজ্ঞতা ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকেই উঠে এসেছে এক অভাবনীয় উদাহরণ।

প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আশরাফুল আলম ভিআইপি প্রটোকলের অংশ হিসেবে বিভিন্নসময় আপ্যায়ন গ্রহণ করতে বাধ্য ছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিটি আপ্যায়নের তথ্য নিজ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতেন, যেন পরে সেই সুবিধাগুলোর হিসাব রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। এটা তিনি শুধু ভাবেননি—বাস্তবেও করেছেন। সিলেট থেকে বদলির সময় তিনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনানুষ্ঠানিক সুবিধাগুলোর হিসাব করে লক্ষাধিক টাকা কোষাগারে জমা দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে রিসোর্স পারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি শুধুমাত্র সেই দিনগুলোর জন্য নির্ধারিত সম্মানী গ্রহণ করেছেন, যেদিন তিনি সম্পূর্ণ সময় দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি অন্য দিনগুলোতে টিফিনের খাবার গ্রহণ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অফিসে সরকারি প্রিন্টার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন—যতবার ব্যবহার করেছেন, ততবারই তিনি তা নিজ ডায়েরিতে নথিভুক্ত করেছেন। এমনকি অফিসের খাবার পানিরও হিসাব রেখেছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনোকিছু ব্যবহার করেননি।

বিজ্ঞাপন

আশরাফুল আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার সম্পর্কে তারই বন্ধু ও বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তার হিজড়া পরিচয় প্রকাশের পরও আশরাফ তাকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি, বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাকে উৎসাহ দিয়েছেন।

ওয়ালিদ উল্লেখ করেছেন, ধর্ম নিয়ে আমি বরাবরই উদাসীন থাকলেও আশরাফদের দেখে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জেগেছিল এবং হলের মসজিদে আশরাফই আমাকে প্রথম নামাজ পড়তে নিয়ে যায়। যেকজন মানুষকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি তার ভেতর আশরাফ একজন। দেশকে বদলাতে এমন আরও অফিসার দরকার।

সম্প্রতি আমতলী থেকে আশরাফুল আলমের বদলির আদেশ হলে আমতলী উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধনে নেমে আসে। এমন অভূতপূর্ব ভালোবাসা একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য বিরলই বটে। তার প্রতি এই ভালোবাসা এসেছে তার স্বচ্ছতা, সততা এবং জনসেবার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি/এএএ 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |