রাজবাড়ীতে সরিষার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক
যেদিকে চোখ যায় বিস্তীর্ণ হলুদের সমারোহ। যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। রাজবাড়ীতে শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলদে ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে। বিশেষ করে জেলার পদ্মার চরাঞ্চলে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন সরিষার ফুল ধরার সময়। অপরুপ এ দৃশ্য দেখে মনে কৃষকরা যেন তাদের ক্ষেতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে।
রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, বালিয়াতান্দি,পাংশা ও কালুখালি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। অল্পকিছু দিনের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের ফসলি জমিতে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতি বিঘা জমিতে মাঘী সরিষা ৩-৪ মণ এবং বারি সরিষা ৫-ছয় মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়। মাঘী সরিষা ৬৫-৭০ দিন এবং বারি সরিষার জাত ৮০-১০০দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। ঘন কুয়াশা বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এবার সরিষার ভালো ফলন হবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে। শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচলিত জাতগুলো থেকেও উন্নত জাতের বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।
সদরের বারলাহুরিয়া গ্রামের কৃষক হাবু মণ্ডল জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ বছর সরিষার ভালো ফলন হবে। সামনে ঘন কুয়াশা সরিষার জন্য ঝুঁকি রয়েছে। গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার কৃষক তারক আলী মণ্ডল জানান, এ বছর যে পরিমাণ সরিষার ফলন হয়েছে, তাতে বিঘা প্রতি ৪-৫ মণের ওপরে ফলন পাওয়া যাবে। তবে তবে পাংশা ও বালিয়াকান্দিতে কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তেমন কোনও ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে ওই এলাকার কৃষকদের। তাদের মতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ যথারীতি দেখাশোনা করে তাহলে অনেক অনাবাদি জমিতে আরও বেশি সবজিসহ সরিষা চাষ করা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা এবং সরিষার ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা সহ অন্যান্য তৈল বীজ জাতীয় ফসল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন জানান, রাজবাড়ীতে এবার মাঘী ও বিভিন্ন ধরনের বারি জাত মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ মণ পর্যন্ত সরিষার ফলন হয়। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে এই অঞ্চলের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরিষার পাশাপাশি তিল, তৃষিসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।
জেবি
মন্তব্য করুন