পাথর কোয়ারিগুলোতে থামছে না মৃত্যুর মিছিল
সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে নানা কারণে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। নিয়মিত ঘটেই চলেছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা। এ সকল মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটছে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটিচাপায়।
সর্বশেষ গেল সোমবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরফিন টিলায় পাথর কোয়ারিতে গর্তের মাটির নিচে চাপা পড়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। এর আগের সপ্তাহে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের কালাইরাগে পাথর উত্তোলনের সময় বোমা মেশিনের বেল্ট ছিঁড়ে আব্দুস সালাম নামের এক শ্রমিক গুরুতর আহত হন। পরদিন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গেল তিন বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিলেটের সাতটি পাথর কোয়ারিতে মাটিচাপায় ৭৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। সিলেট জেলায় সবমিলিয়ে সাতটি পাথর কোয়ারি রয়েছে।
এগুলো হচ্ছে, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, শাহ আরফিন ও উৎমাছড়া, গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এবং কানাইঘাটের লোভাছড়া। যুগ যুগ ধরে এ সকল কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন ও আহরণের কাজ চলছে। তবে আগে দুর্ঘটনার মাত্রা কম থাকলেও উত্তোলন কাজে স্থানীয়ভাবে বামা মেশিন নামে পরিচিত যন্ত্রদানব আসা থেকেই বাড়তে থাকে মৃত্যুর এ মিছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত গেল তিন মাসে সিলেটের সাতটি পাথর কোয়ারিতে ৭৬ পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শাহ আরফিন টিলায় সর্বোচ্চ ২৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, জাফলংয়ে ২১ জন, ভোলাগঞ্জে ১৩ জন, বিছনাকান্দিতে পাঁচজন, লোভাছড়ায় আটজন এবং উৎমাছড়া কোয়ারিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০ জন শ্রমিক।
সিলেট পাথর কোয়ারিগুলোতে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাকে দু:খজনক উল্লেখ করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশা থেকে নিজেদের সরিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত করলেই এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
এদিকে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসবের পেছনের মূল হোতাদেরকে চিহ্নিত করে এদেরকে মামলায় আসামি করা হচ্ছে বলে আরটিভি অনলাইকে জানান সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার আমিনুল ইসলাম।
এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ থানার শাহ আরেফিন টিলায় টাস্কফোর্স’র অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ। এই অভিযানে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও, ওসিসহ টাস্কফোর্স সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে, স্থানীয় সূত্র জানায় দিনের বেলা এসকল অভিযান চলার সময় অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা আগেভাগে খবর পেয়ে অনেকটা আড়ালে চলে যায়। তবে রাতের বেলা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ সেরে ফেলে। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের এই অভিযানের কারণে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা থাকে ভীতসন্ত্রস্ত্র। তাই এ অভিযান নিয়মিত চলতে থাকুক সেটাই তাদের প্রত্যাশা।
জেবি
মন্তব্য করুন