মনু নদ খনন প্রকল্প মাঝ পথে বাতিল
সারা বছর মনু নদে নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে খননের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের অপচয় করে মাঝ পথে এসে বাতিল করা হয়েছে মৌলভীবাজারের মনু নদ খনন প্রকল্প। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর মনু নদীর বাসিন্দারা বন্যাতঙ্কে ভোগছেন।
মৌলভীবাজারের মনু নদের নাব্য বাড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মনু নদ অংশে যে প্রকল্প নিয়েছিল, সেটি আর অগ্রসর হচ্ছে না। মনু নদের খনন প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননের জন্য আনা ড্রেজারগুলো মনু নদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। মনু নদকে নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর খননকাজ শুরু করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। এ প্রকল্পে ছিল মনু ব্যারাজের ভাটি থেকে মনু নদ যে স্থানে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে, সেখান পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার খনন করে নাব্য বাড়ানো হবে। খনন এলাকা থেকে প্রায় ২০ লাখ ঘনমিটার মাটি সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। নদের তলদেশে প্রস্থে ২৫ মিটার এবং আট ফুট গভীর করে খননের নকশা করা হয়। সাত মাসের মধ্যে খননকাজ শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া ছিল।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর কাজ শেষ করতে না পারায় মনু নদ খনন কার্যক্রম বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিটিএ দাবি করছে, এই সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদের তলদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট মাটি সরিয়েছে। এদিকে পলি ও বালু জমে পুরো মনু নদই ভরাট হয়ে আছে। ২০১৮ সালে বন্যা হয়ে মৌলভীবাজার জেলা শহরের একাংশসহ কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। গত বছর বর্ষা মৌসুমে কয়েকবারই মনুর পানি বিপতসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সামনেই বর্ষা মৌসুম। নদ খননের অগ্রগতি না হওয়া এবং এখন খননকাজ বাতিল হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় বন্যা নিয়ে এই জনপদের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায় : ২৪টি নৌপথ)’ প্রকল্প গ্রহণ করে বিআইডাব্লিউটিএ। সেই প্রকল্পের আওতায় সারা বছর মনু নদ নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মৌলভীবাজার সদরের মনুমুখ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর মনুমুখ থেকে চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপন এলাকার মনু নদ প্রকল্পের ব্যারাজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার খননের পরিকল্পনা করা হয়। এতে ২০ লাখ ঘনমিটার মাটি কাটার কথা ছিল। খননকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বিআইডাব্লিউটিএর সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খননকাজের চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে মনু নদের বালিয়াকান্দি, দুর্লভপুর, নতুনবাজার, মনুমুখ ও মীরপুর ঢেউপাশা এলাকায় খনন হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ঘনমিটার মাটি খনন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে সময়সীমা এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ পর্যায়ে এসে আগাম বৃষ্টির কারণে গত বছরের এপ্রিলে মনু নদে পানি ও স্রোত বাড়লে খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিআইডাব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, নদের বাকি অংশ এখন খনন করবে পাউবো।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। বিআইডাব্লিউটিএ মনু নদ খনন প্রকল্পের বাকি টাকা অন্য নদ-নদী খননের কাজে বরাদ্দ করেছে।
বিআইডাব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী সমীর পাল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মনু নদ নিয়ে একটি বড় প্রকল্প নিচ্ছে। সেই কারণে আমরা (বিআইডাব্লিউটিএ) আর খনন করছি না। তবে যতটুকু খনন হয়েছে, তাতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট মাটি মনু নদ থেকে সরানো হয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মনু নদে তো এখন কোনও নৌপথ নেই। কী বিবেচনায় তখন তারা এই নদে খনন প্রকল্প দিয়েছিল, সেটা বলতে পারব না। আমাদের প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার পর পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।
এদিকে গেলে রোববার নয় ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সরকারি সফরে মৌলভীবাজার এসে চাঁদনীঘাটে মনু নদের শহর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, মনু নদের জন্য এক হাজার দুই কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প একনেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মনু তীরের লোকজন আর বন্যাকবলিত হবে না।
জেবি
মন্তব্য করুন