নরসিংদীতে এক যুবককে অপহরণের পরে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত এক নারীসহ অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার অপহরণকারীরা হলেন- রাসেল হাসানের স্ত্রী মারিয়া আক্তার মন্টি, মন্টির সাবেক স্বামী অভিত মিয়া, মন্টির বাবা বাদল মিয়া ও বড় ভাই পাপ্পু মিয়া। তারা নরসিংদী জেলার সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা।
র্যাব জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মো. রাসেল (২৮) নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের একটি দল তদন্ত শেষে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাসেলকে অপহরণের কথা স্বীকারসহ আরও অপরাধের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অপহরণের উদ্দেশ্যে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে মাইক্রোবাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তারা সুযোগ বুঝে বিত্তশালী লোকদের অপহরণ করে। পরে তাদের গোপন স্থানে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করার পাশাপাশি পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে থাকেন।
এদিকে, রাসেলকে অপহরণ বিষয়ে তারা জানায়, আসামিরা গত ২৮ ডিসেম্বর নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসযোগে ছদ্মবেশে ডিবির পরিচয় দিয়ে রাসেলকে তুলে নিয়ে যায়। পরে একটি গোপন কক্ষে হাত-পা ও চোখ বেঁধে রাসেলকে বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করে। এর পাশাপাশি তারা সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে রাসেলের পরিবারের কাছে মুক্তিপণের জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরে রাসেলের পরিবার বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা অপহরণকারীদের নিকট পাঠায় ও বাকি টাকা নগদে পরিশোধ করবে বলে জানায়। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে অবশিষ্ট টাকা নেয়ার জন্য রাসেলকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে নরসিংদীর শাপলা চত্বরে আসার পর রাসেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে মাইক্রোবাস থেকে নেমে ডাকাত, ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে লোকজন আসতে থাকলে অপহরণকারীরা তাকে ফেলে রেখেই দ্রুত পালিয়ে যায়।
র্যাব আরও জানায়, রাসেলের স্ত্রী মন্টি ইতোপূর্বে আরও চার-পাঁচটি বিয়ে করে ওই স্বামীদের নিকট থেকে একইভাবে নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত সৌদি প্রবাসী রাসেলের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই মন্টি তাকে বিয়ে করে। এর কিছু পরে সুস্থ হয়ে রাসেল নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে অপহরণের বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব চারজনকে আটক করে।
এদিকে নির্যাতিত রাসেল গণমাধ্যমের কাছে তাকে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে অপহরণকারীচক্রের সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন।
এজে/পি