মধ্যবিত্তরা না পারছেন সইতে না পারছেন কইতে
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বলেছে, ‘মধ্যবিত্ত হয়ে জন্মানোর চেয়ে ফকির হয়ে জন্মানো ভালো। মধ্যবিত্তরা না পারেন উপরে উঠতে না পারেন নিচে নামতে।’ সাম্প্রতিক সময়ে কথাটা যেন প্রত্যেক মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সত্য হয়ে উঠেছে।
দুর্যোগ-দুর্ভোগে ধনীদের খাওয়া-পরার চিন্তা নেই। নিম্নআয়ের লোকজনেরও টেনশন নেই। কারণ তারা যে কারো কাছে হাত পাততে পারবেন, পাবেন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতাও। যদিও এতেও কষ্টের সীমা থাকে না তাদের। তারপরেও অন্তত সমাজের বিত্তবান আর সরকারের সহায়তায় তাদের কোনোমতে দু’বেলা খাবার জোটে যায়। কিন্তু কারো দ্বারে যেতে পারেন না কিংবা মুখ ফোটে কাউকে কিছু বলতেও পারেন না একমাত্র আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মধ্যবিত্ত লোকজন।
করোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমাদের দেশও যখন অঘোষিত লক ডাউনে। তখন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার দিন গুনা শুরু হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনদের। সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নআয়ের লোকজনদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে দেয়া হয়েছে বরাদ্দও। দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছেন সমাজের অনেক বিত্তবানরাও। নিম্নআয়ের লোকজন ভয়-সংকোচ দূরে ঠেলে সাহায্যের ব্যাগটা হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু নীরবে না খেয়েও মুখে হাসি নিয়ে দিব্যি দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আবেগে কিংবা আকার ইঙ্গিতে সেই কষ্টের কথা পোস্ট করলেও সহযোগিতা নেয়ার বেলায় বিপরীত। বিবেক তাদের মোটেও সায় দেয় না।
সাংবাদিক ফজলে এলাহী তার ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘কথিত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ত্রাণ পাওয়ায় লজ্জা ভুলে নিজের ত্রাণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারছেন, সে ঘোমটা'টা আরেকটু বড় করে ত্রাণও নিতে পারবে..... ব্যাপার নাহ্.... অযথা টেনশন নিয়েন নাহ্...তাঁর পোস্টের নিচে কমেন্ট করেন শহরের ব্যবসায়ী শফিউল।
তিনি নিজ মন্তব্যে লিখেন- ‘ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্ত সকলের জন্য রেশন কার্ড পরিবারের সদস্য অনুপাতে চালু করলে তখন আর আমি পেয়েছি বা পাই নাই এই সমস্যা হবে না। যার দরকার সে নিয়ে চলে আসবে বরাদ্দ তখন ঠিকমতো হবে। নেতার পেছনে কমিশনারের পেছনে দৌড়াতে হবে না। যার প্রয়োজন সে আনবে যার প্রয়োজন নেই সে আনবে না। যখনি কোনও দুর্যোগ বা খারাপ পরিস্থিতির শিকার হবে ওইখানে রেশন চালু করবে। তখন রেশন কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে এতে করে ক্ষমতার আধিপত্য সেলফি বা নিজেকে জাহির করার প্রবণতা কমে আসবে।
শিক্ষক রাতুল ইসলাম পোস্ট করেন, ‘গরিবরা পাচ্ছে ভাতা, বড়লোকদের একবছর লকডাউনে কোনও সমস্যা হবে না, দেয়ালে পিঠটা মধ্যবিত্তদের ঠেকেছে।’
একেতো পেটে দেবার চিন্তা, তার ওপরে আছে বাড়ি ভাড়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ। এর মধ্যে যদি পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তবেতো মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিবে এসব মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য।
যার কারণে উদারমনা কোনও প্রতিবেশী যদি সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন, ‘তাকেও সসম্মানে আর সহাস্যে জবাব দেয়, ‘আমারতো সব আছে, কিছু লাগবে না।’
পকেটে টাকা না থাকলে ধারের জন্য ছুটে যায় আরেক মধ্যবিত্ত প্রতিবেশি কিংবা আত্মীয়-বন্ধুর কাছে। কিন্তু দেশের এহেন পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থা বিবেচনায় সেই ধারও চাওয়া যায় না কোনোমতে। ফলে খেয়ে না খেয়ে নীরবেই জীবন পার করছেন মধ্যবিত্তরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধনী ও নিম্নবিত্তদের খাওয়ার চিন্তা না থাকলেও মধ্যবিত্তের জীবন অতিষ্ট করোনার গ্যাড়াকলে।
জেবি
মন্তব্য করুন