লাখো লোকের জানাজার দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন সবাই
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাযায় ব্যাপক লোকসমাগমের ঘটনায় দায় এড়াচ্ছেন সবাই।
আশপাশের গ্রামের মানুষের বক্তব্য জানাজায় যোগ দিতে মানুষ এসেছিল বাইরে থেকে। আর স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মুখ লুকিয়েছেন ঘটনার পর থেকেই।
জেলার ডিসি-এসপি ওইদিন থেকে আড়ালে। পুরোপুরি এড়িয়ে চলছেন সাংবাদিকদের। ফোন পর্যন্ত ধরছেন না। তবে এ ঘটনায় সরাইল থানা ও সার্কেলের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
ওদিকে জানাজার পর আটটি গ্রামের মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়ে তা মানানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা যোবায়ের আহমেদ আনসারীর নামাজে জানাজা হয় সরাইলের বেড়তলা গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদরাসা মাঠে। এই মাঠের সীমা ছাড়িয়ে জানাজা বিস্তৃত হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে। লাখো লোকের সমাগম হয় সেখানে। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি এই লোক এসেছে বাইরে থেকে। বেড়তলা গ্রামের আরিফ মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের লোক হাজার-দুই হাজার হবে। মানুষ বলছে জানাজায় ৫০ থেকে ৮০ হাজার লোক হয়েছে। এই লোক সবাই এসেছে বাইরে থেকে।
এ গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষ যাচ্ছে তাই গিয়েছি।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরজমিনে বেড়তলা ও বগুইর গ্রামে গেলে কথা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। তাদের কেউ জানাজায় গিয়েছেন কেউ যাননি।
জানাজারা নামাজের বিষয়ে কোনও প্রচারণা ছিল না জানিয়ে জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলার শিক্ষক মুফতী আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, হুজুরের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। আমাদের ধারণা ছিল আশপাশের কিছু মানুষ আসবে। প্রশাসন থেকে আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার পর আমরা মিটিংও করি। আমরা হুজুরের দাফন-কাফন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কতো লোক হয়েছে তা আমরা বুঝতেও পারিনি। আমরা জানাজায় আসার আহ্বান জানিয়ে কোনও মাইকিংও করিনি। ফোনেও কাউকে আসতে বলিনি। এখন ফেসবুকের জমানা। ফেসবুকে সব ছড়াছড়ি হয়। ঢাকা, কিশোরগঞ্জ,নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জানাজায় লোক আসে মাইক্রো, ট্রাকে ও পিকআপে করে।
কিন্তু জেলার প্রবেশমুখে থাকা আশুগঞ্জ থানা পুলিশের কর্মকর্তারা এই দায় নিতে রাজি নন। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। চেকপোস্টে পুলিশ ছিল। মোবাইল ডিউটি ছিল তারা চেষ্টা করেছেন। তেমনিভাবে সিলেটের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজনকে আটকাতে ব্যর্থ হয় বিজয়নগর থানা পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইওয়ে থানার কর্মকর্তারাও পালন করেনি কোনও দায়িত্ব। লকডাউনের মধ্যেও থানার সামনে দিয়ে অবাধে চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে চেয়ার ছেড়ে থানার ওপরে থাকার ঘরে চলে যান ওসি মো. মাঈনুল ইসলাম।
হাইওয়ে থানার পাশে কৃষি ব্যাংকের শাখায় ভাতা নিতে আসা শতশত লোকের ভিড় চোখে পড়ে গতকাল সোমবার দুপুরে। এভাবে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সবাই দায় এড়াচ্ছেন ওই ঘটনায়।
ওদিকে গেল শনিবার সন্ধ্যায় জানাজার পর সরাইল উপজেলার শান্তিনগর, সীতাহরণ, বড়ইবাড়ি, বেড়তলা ও সদর উপজেলার মালিহাতা এবং আশুগঞ্জ উপজেলার খড়িয়ালা, বগুইড়, মৈশার গ্রামের মানুষকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
এসব গ্রামের বাসিন্দা প্রায় ৩৫-৪০ হাজার মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করছে পুলিশ। স্থানীয় লোকদের নিয়ে কমিটিও করা হয়েছে। বেড়তলা গ্রামের এই কমিটির সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান মাস্টার জানান, মানুষ যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, জটলা না করে সেটি আমরা দেখছি।
তাদের খাওয়া-খাদ্যের সমস্যা হলে আমাদের ১২ সদস্যের যে কমিটি করা হয়েছে তাদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।
জানাজার লোকসমাগম ঠেকানোর ব্যর্থতায় সরাইল থানার ওসি সাহাদত হোসেন টিটু, সরাইল সার্কেলের এএসপি মো. মাসুদ রানা এবং সরাইল থানার ওসি-তদন্ত নূরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়।
নতুন ওসি নাজমুল আহমেদ যোগ দিয়েছেন সরাইল থানায়।
ওসি বলেন, মানুষকে বুজাচ্ছি। সমস্ত লোককে ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। কমিটি করে দিয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এই নামাজে জানাজায় যোগ দেন। শুক্রবার প্রখ্যাত এই আলেমের মৃত্যুর পর জেলার বিভিন্ন স্থানে মসজিদের মাইক থেকে তার মৃত্যুর খবর এবং জানাজার সময় প্রচার করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তা প্রচার করা হয়।
জেবি
মন্তব্য করুন