নড়াইলে তিন গ্রাম পুরুষশূন্য
নড়াইল জেলার কামাল প্রতাপ, শালিখা ও আমাদা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গেল আট বছরে তিনজন খুন হয়েছেন। এ পর্যন্ত ২০টির মতো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পুলিশের ওপর হামলা ও পিকআপভ্যান ও বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দুটি মামলায় ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ফলে তিনটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাতে সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামে চারটি বাড়ি ভাংচুরের সময় পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক করলে তিন গ্রামের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে মারধর ও আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কামাল প্রতাপ গ্রামের সাফি ম্যোল্যা হত্যা মামলার আসামি আফজাল জমাদ্দার, রাজ্জাক মল্লিক, মন্টু মল্লিক ও মোস্তাক মল্লিকের বাড়ি প্রতিপক্ষ বাদীপক্ষের সেকেন মেম্বর, বাবুল শেখ, সাইফুল মোল্যা ও আফসার মিঞার লোকজন ভাংচুর ও লুটপাট করছিল। এ সময় টহল পুলিশ খবর পেয়ে ভাংচুর ও লুটপাটকারীদের ধাওয়া করে আহাদ খান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী আমাদা, শালিখা ও কামালপ্রতাপ গ্রামের প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি লাঠিসোটা নিয়ে আসামি ছিনিয়ে নিতে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করলে কনস্টেবল আশিক ও রাকিব আহত হয়। সন্ত্রাসীরা পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করে । পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
জানা যায়, সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ, শালিখা এবং পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের আমাদা গ্রামের বাবুল শেখ, সাইফুল মোল্যা, সেকেন মেম্বর, আফসার মিঞা গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ জমাদ্দার, টুলু জমাদ্দার, আফজাল জমাদ্দার, রাজ্জাক মল্লিক, মন্টু মল্লিক ও মোস্তাক মল্লিক গ্রুপের দীর্ঘ আট বছর ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে। এ পর্যন্ত দুই গ্রুপের মধ্যে কমপক্ষে ২০বার সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ এরই জের ধরে প্রতিপক্ষের হাতে গেল পাঁচ বছর পূর্বে কামাল প্রতাপ গ্রামের এসকেন্দার কাজী, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল ডাবলু শেখ এবং এ বছরের ১৩মার্চ সাফি মোল্লা (৩৫) খুন হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াছ হোসেন ঘটনার বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি ৩৭ জনের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত।
এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, এসব গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম্য দ্বন্দ্ব-ক্যাইজা লেগেই আছে। আমি নড়াইলে যোগদানের পর এসব দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ মীমাংসার চেষ্টা করছি এবং এ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ বুধবারের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেবি
মন্তব্য করুন