বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও মুজিববর্ষে রেকর্ড সংখ্যক এমপিওভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধার টাকা প্রদান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট। মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দপ্তরটি ১৫ হাজার এমপিওভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধার আবেদন নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। মার্চ, ২০২০ হতে ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত ২১ হাজার ৬ শত ৩৩ জন শিক্ষক কর্মচারীকে কল্যাণ সুবিধা বাবদ ৯ শত ৫৭ কোটি টাকা প্রদান করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৬ হাজার বেশি এমপিওভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধা প্রদান করে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এ দেশের ৩০ হাজারেরও অধিক এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জীবন শেষে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। কল্যাণ ট্রাস্টের আইন অনুযায়ী একজন শিক্ষক কিংবা কর্মচারী তাদের সর্বশেষ বেতন স্কেল অনুযায়ী যত বছর চাকরি তত মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা কল্যাণ সুবিধা বাবদ পেয়ে থাকেন।
বর্তমান সরকারের শাসনামলে ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন শতভাগ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তির পরিমাণও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ২০১৮ সাল হতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীগণ ৫% ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্ত হয়। ফলে আইন অনুযায়ী মূল বেতনের সাথে প্রতি বছর ৫% ইনক্রিমেন্ট যুক্ত করে চাকরি শুরুর দিন থেকে সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্ত হন। ফলে কল্যাণ ট্রাস্টে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এই সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য সরকার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার বৈরি পরিস্থিতি, আর্থিক ও জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও মুজিববর্ষে কীভাবে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব, শিক্ষক নেতা, অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি-কল্যাণ সুবিধার দ্রুত নিষ্পত্তি’ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে কল্যাণ ট্রাস্টের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগণ করোনা মহামারীর শুরু থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন। এছাড়া ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও কল্যাণ ট্রাস্টের সেবা প্রদান অব্যাহত ছিল। এ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ কাজ করেছেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও বোর্ডের সদস্যরা সার্বক্ষণিক উৎসাহ প্রদান করেছেন। আর এজন্যই এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিগত ১৮ বছরে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ১৭৯ কোটি টাকা। আর বর্তমান সরকারের শাসনামলে ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৭৯ জন শিক্ষক কর্মচারীকে ৩ হাজার ৩ শত ৩০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।