ঢাকামঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন, প্রশাসন ক্যাডারে সাইফুল্লাহ 

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ , ১২:৫০ পিএম


loading/img
ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ২ হাজার ১৬৩ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মো. খালিদ সাইফুল্লাহ। তার বাড়ি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার রামনগরে। শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বরধারী এ শিক্ষার্থী আরটিভি নিউজকে তার বিসিএস যাত্রার গল্প শুনিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাবিপ্রবির প্রতিনিধি নাঈম আহমদ শুভ।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি নিউজ : বিসিএসে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার জার্নিটা কেমন ছিল?

খালিদ সাইফুল্লাহ : বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করার পর মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি কোনোটাতেই এ প্লাস (A+) না থাকায় মোট নম্বরে পিছিয়ে পড়ায় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাইনি। এরপর অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেও শাবিপ্রবি ছাড়া কোথাও ভর্তির সুযোগ পাইনি। মেডিকেলে সুযোগ না পাওয়ার ব্যর্থতা থেকে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে; যাতে সামনের জীবনে সহজে কোনো ব্যর্থতা না আসে। সেই লক্ষ্যে লোকপ্রশাসন বিভাগের শুরুর দিকের ক্লাসগুলো মনোযোগ দিয়ে করতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমি বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়ায় সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিল। এমন সময় আমি হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবে ড. সলিমুল্লাহ খানের (স্যার) একটা লেকচার শুনি। আমি অবাক হয়ে দেখি, তিনি সামাজিক বিজ্ঞানের এই দুর্বোধ্য বিষয়গুলোকে শব্দ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই বোধগম্য করে ব্যাখ্যা করছেন। এরপর এই শব্দ বিশ্লেষণের কৌশল আমি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি। বলতে গেলে এই কৌশলের জন্যই আমার স্মরণশক্তি যথেষ্ট কম থাকা সত্ত্বেও বেশ সহজেই আমি আমার বিভাগের রেকর্ড ফল নিয়ে স্নাতক পাস করি। এমনকি একই সময়ে (স্নাতকোত্তর চলাকালে) প্রথমবারই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই এবং অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করে (কোনো কোচিং সেন্টারে লিখিত পরীক্ষার মডেল টেস্ট দেওয়া ছাড়া) প্রথমবারেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। আমার বিসিএস জার্নিতে সলিমুল্লাহ খান (স্যার) পরশপাথর তুল্য (গুরু)।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি নিউজ : আপনার পছন্দের ক্যাডার কোনটি ছিল?
 
খালিদ সাইফুল্লাহ : লোকপ্রশাসন বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার আমার পছন্দের ক্যাডার ছিল।

আরটিভি নিউজ : কখন থেকে আপনার বিসিএসের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে?

খালিদ সাইফুল্লাহ : বিসিএসের প্রতি আগ্রহ কৈশোরকাল থেকে হলেও প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মে সাবেক ক্যাবিনেট সচিব ড. আকবর আলী খান সম্পর্কে জানার পর। তিনি অনেক জটিল বিষয় রম্য ও বৈঠকি ঢংয়ে তার বইয়ে উপস্থাপন করেন। তার বইগুলো পড়েই আমার মধ্যে পাঠ্যসূচির বাইরের বই পড়ার আগ্রহ জন্মায়। আকবর আলী খানের বইগুলো পড়ার পর তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমার মনে কৌতূহল হয়। সেই কৌতূহল থেকে জানতে পারি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এই লেখক মূলত প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর সিভিল সার্ভিসে তার বর্ণাঢ্য ও চ্যালেঞ্জিং কর্মজীবনের কথা জানতে পেরে মনে মনে স্থির করি প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি নিউজ : এ জার্নিতে আপনাকে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে?

বিজ্ঞাপন

খালিদ সাইফুল্লাহ : বিসিএস ক্যাডার হওয়ার এই জার্নিতে আমাকে খুব বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়নি। তবে আমার মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার পাঁচদিন পর ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কিছুটা বেগ পেতে হয়। অন্যদিকে ৪৩তম বিসিএসের ভাইভার ২০ দিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করায় এবং ভাইভার তিনদিন আগে মাস্টার্সের থিসিস প্রেজেন্টেশন থাকায় (যদিও পরে আর থিসিস প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়নি) ভাইভা নিয়ে বেশ মানসিক চাপ অনুভব করেছিলাম।

আরটিভি নিউজ : বিসিএসের এ জার্নিতে আপনাকে কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?

খালিদ সাইফুল্লাহ : বিসিএসের এ জার্নিতে আমার মা-বাবাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এ ছাড়া মান্যবর শাহরিয়ার কবির শুভ (ভাই), বন্ধু রুবেল-সাদেকুল এবং অনুজ নজরুল-শরীফ তারা আমার অনুপ্রেরণার বড় উৎস ছিলেন।

আরটিভি নিউজ : বিসিএস প্রস্তুতির জন্য আপনার পরিকল্পনা কেমন ছিল?

খালিদ সাইফুল্লাহ : আমার স্মরণশক্তি কম থাকায় আমি বিসিএসের সিলেবাসের প্রতিটি টপিকের স্পষ্টভাবে ‘কনসেপচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ গড়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নেই।

আরটিভি নিউজ : আগামীতে যারা বিসিএস দেবেন, তাদের প্রতি আপনার কি বার্তা?

খালিদ সাইফুল্লাহ : বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের মনে একটি ভুল ধারণা আছে যে বিসিএসের জন্য অনেক কিছু মুখস্ত করতে হয়। আমার প্রথম কথা হচ্ছে, আপনারা এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসেন। কারণ, বিসিএসের বিগত সময়ের প্রশ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়ের সবগুলো টপিকের উপর স্পষ্টভাবে ‘কনসেপচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ গড়ে তুলতে পারলে বেশ সহজেই বিসিএসের বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |