ঢালিউডের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। আজ ১৭ ডিসেম্বর এই নায়িকার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন শাবনূর।
‘চাঁদনী রাতে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমের চলচ্চিত্রে অভিষেক তার। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেন এহতেশাম। তার নায়ক ছিলেন সাব্বির। কিন্তু ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।
পরে নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। এই জুটির ১৪টি ছবি দর্শকরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছিলেন। যার আবেদন আজও কমেনি।
এ জুটির প্রথম ছবি ‘তুমি আমার’ ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন জহিরুল হক। একই বছর শাহ আলম কিরণ তাদের নিয়ে ফারুক-কবরী জুটির ‘সুজন সখী’ চলচ্চিত্রের রঙিন পুনঃনির্মাণ ‘সুজন সখী’ নির্মাণ করেন।
১৯৯৫ সালে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ১৯৯৬ সালে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ১৯৯৭ সালে শিবলি সাদিক পরিচালিত ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিগুলো দারুণ সাড়া ফেলে।
সালমানের পর নায়ক রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধেও অসংখ্য ছবি উপহার দেন শাবনূর। এই নায়কের বিপরীতে ১৯৯৭ সালে ‘মন মানেনা’ ও ‘তুমি শুধু তুমি’ মুক্তি পায়। এরপর ১৯৯৯ সালে রিয়াজ-শাবনূর জুটির ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ও ‘বিয়ের ফুল’ ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। বলা চলে সালমান শাহের পর রিয়াজ-শাবনূরই জুটি হিসেবে দর্শকের মনে আজো রাজত্ব করছে।
২০০০ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘নারীর মন’ ও ‘এ মন চায় যে’ মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন মতিন রহমান। এছাড়া এফ আই মানিক পরিচালিত ‘এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, সাঈদুর রহমান সাঈদ পরিচালিত ‘এরই নাম দোস্তি’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’ নায়ক ছিলেন শাকিব খান ও ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত ‘গোলাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
এরপর ২০০১ সালে আবারো দেখা মেলে রিয়াজ-শাবনূর জুটির। এসময় তারা দর্শকদের উপহার দেন ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’। যেটি পরিচালনা করেন দেবাশীষ বিশ্বাস। একই বছর গাজী মাহবুব পরিচালিত ‘প্রেমের তাজমহল’ ও এফ আই মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নের বাসর’ ছবিগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। ২০০২ সালে গুণী নির্মাতা আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী বধূ’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘হৃদয়ের বন্ধন’ ও ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মিলন হবে কত দিনে’ ও ‘ভালবাসা কারে কয়’, শাহাদৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এবং আজাদী হাসনাত ফিরোজ পরিচালিত ‘সবার উপরে প্রেম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালে অভিনয় করেন মতিন রহমান পরিচালিত ‘মাটির ফুল’, এফ আই মানিকের ‘দুই বধূ এক স্বামী’, আমজাদ হোসেনের ‘প্রাণের মানুষ’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ’, জিল্লুর রহমানের ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’, মহম্মদ হান্নানের ‘নয়ন ভরা জল’ ছবিতে। ২০০৪ সালে এই নায়িকা কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘অন্য মানুষ’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘ফুলের মতো বউ’, মিজানুর রহমান খান দীপুর ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, শিল্পী চক্রবর্তীর ‘তোমার জন্য পাগল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
২০০৫ সালে শাবনূর অভিনীত সিনেমার মধ্যে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘দুই নয়নের আলো’ এবং ‘আমার স্বপ্ন তুমি’। ‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবনূর।
২০০৬ সালে শাবনূর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘জনম জনম’ অবলম্বনে নির্মিত ‘নিরন্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেন আবু সাইয়ীদ। ২০০৭ সালের মুক্তি পায় মালেক বিশ্বাস পরিচালিত ‘মেয়ে সাক্ষী’, মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ এবং পি এ কাজল পরিচালিত ‘আমার প্রাণের স্বামী’।
এরপর ২০০৮ সালে পি এ কাজলের ‘১ টাকার বউ’ ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন শাবনূর। এই ছবিটিও ব্যবসা সফল হয়েছিল। ২০০৯ সালে রিয়াজের বিপরীতে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘তুমি আমার স্বামী’, এটিএম শামসুজ্জামান পরিচালিত ‘এবাদত’ ও আব্দুল মান্নান পরিচালিত ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ এবং শাকিব খানের বিপরীতে পি এ কাজল পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’ ও শাহ মোঃ সংগ্রাম পরিচালিত ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
২০১০ সালে শাবনূর অভিনয় করেন মনতাজুর রহমান আকবরের ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘চাঁদের মত বউ’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘মন ছুঁয়েছে মন’, চন্দন চৌধুরীর ‘ভালোবেসে বউ আনব’ এবং বি আর চৌধুরীর ‘বধূ তুমি কার’ ছবিতে।
এই নায়িকা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাবস্থায় ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল হয় শাবনূরের। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। এরপর মিডিয়াকে আড়াল করে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন শাবনূর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। তার ছেলের নাম আইজান নিহান। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বামীকে তালাক দেন শাবনুর।
বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে সরে রয়েছেন শাবনূর। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর বর্তমানে তার একমাত্র সন্তান আইজান নিহানকে নিয়েই সব ব্যস্ততা। অস্ট্রেলিয়ায় কাটছে জন্মদিন। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেখানে থেকেই তুলে ধরেছেন মনের কিছু কথা।
জন্মদিনে শাবনূরের লেখা কবিতা হলো—
জীবনের রং বড় বিচিত্র,
কখনো লাল কখনো নীল।
কখনো মুক্ত পাখির মতো।
কখনো আবার চুপসে যাওয়া ফুলের মতো।
হারিয়ে যায় কত চেনা মুখ।
থেকে যায় শুধু অনাবিল সুখ।’
শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। কিন্তু গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তার নাম বদলে রাখেন শাবনূর। আজকের দিনে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
জিএ