আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গাওয়া গানটি মান্নার ঠোঁটে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। গানটি রাতারাতি পৌঁছে গিয়েছিলো সারাদেশের মানুষের কাছে। হাটে-ঘাঠে-মাঠে-ময়দানে বেজেছে ‘অনন্ত প্রেম’। বাচ্চুকে এক প্রকার জোর করেই সিনেমায় নিয়ে এসেছিলেন মান্না। অনেক অনুরোধের পর বাচ্চু প্লেব্যাক করতে রাজি হয়েছিলো। নায়ক, গায়ক দুজনই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ও নায়ক মান্না প্রযোজিত ‘লুটতরাজ’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন আইয়ুব বাচ্চু। এই নির্মাতা জানান, ‘মান্নার একান্ত আগ্রহেই বাচ্চুর মতো একটি চমৎকার কণ্ঠ আমাদের সিনেমায় এসেছে। সে গেয়েছিলো এবং ইতিহাস করে দিয়ে গেছে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই নির্মাতা আরও জানান, ‘আমি যখন ‘লুটতরাজ’ সিনেমাটি বানাচ্ছি তখন একটা চমক খুঁজছিলাম। হঠাৎ মান্না বললো কাজী ভাই, আইয়ুব বাচ্চুর একটি গান ছবিতে থাকলে কেমন হয়। আমি বললাম খুবই ভালো হয়। তরুণদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু সে কী সিনেমায় গাইবে? ব্যান্ডের তারকারা সচরাচর সিনেমায় গাইতে চান না। মান্না বললো, আগে কথা বলে দেখেন কী বলেন উনি। পরে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে আমি আলাপ করলাম। তিনি শুনেই না করে দিলেন। বললেন বাচ্চু সিনেমায় গাইবে না কিছুতেই। আমি মান্নাকে জানিয়ে দিলাম যে হবে না। শুনে মান্না বললো, কাজী ভাই হবে। টেনশন কইরেন না আমি দেখতেছি ব্যাপারটা।’
‘আম্মাজান’খ্যাত এই নির্মাতা বলেন, ‘কেমন করে কী করলো জানি না। দু’দিন পর মান্না এসে বলে বাচ্চু ভাই রাজি। উনি ‘লুটতরাজ’ ছবিতে গাইবেন। আমি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে জানালাম বিষয়টা। শুনে বুলবুল পাত্তা দিলো না। হাসলো আর বললো আমি বিশ্বাস করি না বাচ্চু গাইবে। মান্না তখন নিজে টেলিফোন করে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে কথা বলিয়ে দিলো। বাচ্চু নিজে জানালো যে ‘বুলবুল ভাই গান লেখেন আমার জন্য। গাইবো আমি।’ পরে মান্না জানিয়েছিলো, তার অনেক অনুরোধে রাজি হয়েছিলো বাচ্চু।’
এরপর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর ও সংগীতে তৈরি হয় ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গানটি। আইয়ুব বাচ্চুর গানের ধরণ মাথায় রেখেই গানটি লিখেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কনকচাঁপা।
লুটতরাজের জনপ্রিয়তার পর বাচ্চুর সিনেমার গানের প্রতি ভালো লাগা জন্মায়। সে বুঝতে পেরেছিলো সিনেমার মাধ্যমে খুব সহজেই ‘মাস পিপল’র কাছে পৌঁছানো যায়। পরবর্তীতে মান্নার সঙ্গে তার একটা জুটি গড়ে উঠেছিলো।
‘আম্মাজান’ ছবিতে ‘আম্মাজান’ গানটি গেয়ে নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিলো আইয়ুব বাচ্চু। তার সেই গান বাংলাদেশের বাইরেও ঝড় তুলেছিলো বাংলার ভাষার শ্রোতা ও সিনেমার দর্শকদের মনে। এই ছবির ‘স্বামী আর স্ত্রী বানাইছে কোন মিস্তিরি’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।’
এরপর আরও অনেক সিনেমাতেই কণ্ঠ দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। পেয়েছেন জনপ্রিয়তাও। তবে চলচ্চিত্রে আইয়ুব বাচ্চুর সাফল্যের নৈপথ্য নায়ক হিসেবে বাংলা সিনেমার ‘সুপারস্টার’ মান্নাকেই ভাবা হয়। তার অনুরোধ রাখতেই সিনেমায় প্লেব্যাক করতে এসেছিলেন বাচ্চু, আর গানে গানে এই আঙিনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
এনএস