সুলতান সাহেব সরকারি চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসরে গেছেন। একটা দুর্ঘটনায় তিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের আর ৫ জন বাবার মতোই সন্তানদের নিয়ে সচেতন। তিন ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে তার সংসার।
দীপা সবার বড়ো। সম্প্রতি পড়াশোনা আর চাকরি জীবন শেষ করে নিজের বুটিক শুরু করেছে। পিউশ মেজ।সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। তার স্বপ্ন ন্যাশনাল আন্ডার নাইটিন ক্রিকেট টিমে খেলা। এই ইস্যু নিয়ে বাবার সঙ্গে তার বিরোধ। দীপা বিষয়টাকে ম্যানেজ করে সবসময়। এদিকে আরেক মেয়ে জেবা। সে সবার ছোট। এবার এইচএসসি দেবে। যদিও পড়াশোনা নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই। মায়ের ভাষায় সে দীপার মতো এতো মেধাবীও না, সুন্দরীও না।
এ পরিবারের সবকিছুর একমাত্র আশ্রয়স্থল দীপা। সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সব কিছুই দীপা। আর দীপাও সবাইকে ভালো রাখার এক মহান ব্রত নিয়ে প্রতিদিন যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তার এই পথচলায় আরেকজন আছেন- তার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ শাওন। শিল্পপতি বাবার একমাত্র ছেলে। পুলিশের এএসপি পদে চাকরিরত। কিন্তু শাওনের দুঃখ একটাই- বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরেও দীপা তার পরিবারের বাইরে নিজেকে নিয়ে ভাবতেই চায় না। এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইদানীং। যদিও শাওনের বাবা দীপার এই বুটিকের ব্যবসা করাটা খুব একটা সহজভাবে নিতে চান না। এভাবেই চলছিল দীপাদের গল্পটা।
দীপা একদিন আবিষ্কার করে তার ছোট বোন জেবা অন্তঃসত্ত্বা। মা-বাবা কাউকে না জানতে দিয়ে জেবাকে নিয়ে ডাক্তাররের কাছে চলে যায় দীপা। দীপা জেবার কাছে জানতে চায় কে সে? জেবা জানায় ওদের ছোট খালা দীপার জন্যে একবার বিয়ের সম্বন্ধ এনেছিল। কিন্তু দীপা রিফিউজ করেছিল। সেই রাসেল মাহমুদই দীপার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে জেবাকে ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে মিথ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে। দীপা খুব কষ্ট পায়। হাসপাতাল থেকে বের হতেই টিভির ব্রেকিং নিউজে দেখা যায়- পিউশ উগ্র জঙ্গিবাদের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
এই ঘটনায় ওরা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দীপার চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিউশের সহজ-সরল মুখটা। ক্রিকেটপাগল তার এই ভাইটাকে আগে থেকেই কেউ ফলো করতো। আন্ডারনাইনটিনে চান্স না পেয়ে পিউশ খুব মুছড়ে পড়ে। আর সেই সময় উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পিউশের জীবন-আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। খেলার মাঠেও যেতে চাইতো না সে। দীপার চোখে পড়লেও তেমন গা করেনি সেই সময়। এখন বুঝতে পারছে কত বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে..!! এখন আর এইসব ভেবে লাভ নেই। পিউশকে যে করেই হোক ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাই লজ্জার মাথা খেয়ে আবার শাওনকেই ফোন করে অনুরাধ করে পিউশকে ফিরিয়ে আনার জন্যে।
বাবা ঠিকই টের পেয়ে যায় পিউশের ঘটনা। কিন্তু টিভি বন্ধ করে রাখেন যাতে মা টের না পান। আর দীপাকে অনুরোধ করেন যেন সে পিউশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। পিউশকে ছাড়াতে টাকা লাগবে। এদিকে বুটিকের বাড়িআলাকে তার অগ্রীম টাকা দেওয়ার কথা। সে-ও টাকার জন্যে চাপ দেয়। দীপার মনে পড়ে মামুন সাহেবের কথা এই শহরের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এবং ব্র্যান্ড ক্লথিংয়ের মালিক যাকে ছাড়া ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড দীপ্তিহীন। দীপা সাহায্যের জন্যে তার কাছে যায় কিন্তু সুযোগ সন্ধানী মামুন তাকে বিনিময়ের ভিত্তিতে সাহায্যের কথা বলে। দীপা অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু সময়ে মানুষকে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। দীপা মামুনকে ফোন করে। এবং মামুন ওকে ভালো কিছু ক্লায়েন্ট পাইয়ে দেয়। যদিও মামুন এর বিনিময়ে দীপার কাছে কিছু চায় কিন্তু দীপা তা সসম্মানে ফিরিয়ে দেয়।
দীপার পরিবারে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে। জেবা সুস্থ হতে তাকে। পিউশ ফিরে আসে। আবার খেলার মাঠে যায়। দীপা ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে অনুরোধ করায় পিউশকে ওরা আবার টিমে চাপ দেয়। এবং আন্ডার নাইনটিনের টিমের জন্যে বোর্ডে নাম পাঠায়। খবর পেয়ে সবাই খুব খুশি হয়। দীপা সবাইকে পার্টির আয়োজন করতে বলে। এরমধ্যে শাওনর বাবা-মা ওর বিয়ের জন্যে চাপ দেয়। শাওনের বাবার বন্ধুর বিদেশ ফেরত মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু শাওন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। সে দীপার সাথে দেখা করে জানতে চায় সে কি করবে? কিন্তু দীপা বলে- জীবনটা তার সিদ্ধান্তটাও তার। দীপা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নতুন ক্লায়েন্টরে প্রোডাক্ট ডেলিভারির জন্যে তাকে পুরানঢাকার কাঁচামালের ব্যবসায়াদের কাছে যেতে হবে। কিন্তু শাওনের এই মানসিক অবস্থাতেও সে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। শাওন রাগ করে চলে যায়। দীপার ভীষণ কান্না পায়।
এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে ওয়েব ফ্লিম ‘অদিতি’র গল্প। বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিডেটের প্রযোজনায় ঈদের দিন ২টা ১০ মিনিটে ‘ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে এটি। রচনা ও পরিচালনা রাকেশ বসু। এতে অভিনয় করেছেন সোহানা সাবা, রাশেদ মামুন অপু, সাবেরী আলম, আবদুল্লাহ রানা, মিহি আহসান, গাজী আব্দুন নূর, আশরাফুল আলম সোহাগ প্রমুখ।