বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। একসময় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। তবে বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অভিনয়ের বাইরে আছেন। ৮২ বছর বয়সী এই অভিনেতার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। আপাতত ঘরবন্দি হয়েই কাটছে তার জীবন।
আগের মতো আর হাঁটাচলা করতে পারেন না। তার দিন কাটছে ঘরে হুইলচেয়ারে বসে কিংবা বিছানায় শুয়ে। কয়েক বছর ধরে হাঁটুর সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র গণমাধ্যমে জানান, তারা বাবা একদমই চলাফেরা করতে পারেন না। চলতি বছরই তার হাঁটুতে অপারেশন করাতে হবে, চিকিৎসক এমন পরামর্শ দিয়েছেন। দেশেও হতে পারে অপারেশন। দরকার হলে বিদেশেও যেতে হতে হবে।
তিনি আরও জানান, বাবা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। নতুন করে যোগ হয়েছে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার সমস্যা। প্রায়ই তিনি কিছু মনে করতে পারেন না। বাবার শ্রবণশক্তিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। হৃদরোগের জটিলতাও রয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের শুরুতে ভারতে অস্টিওপরোসিসে রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন প্রবীর মিত্র। বর্তমানে নীরবে নিভৃতে ও একাকিত্বে ধানমন্ডিতে ছেলের বাসায় দিন কাটাচ্ছেন এ অভিনেতা।
১৯৭১ সালে এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন প্রবীর মিত্র। এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পর্দায় নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে প্রবীর মিত্রকে। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে ছিলেন তিনি। এ কারণেই অনেকে তাকে ঢাকাই সিনেমার ‘রঙিন নবাব’ বলে ডাকেন।
তার অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘চাষির মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’, ইত্যাদি।
কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুর জেলার নতুন বাজারে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তবে তার শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। ব্যক্তি জীবনে তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রী অজন্তা মিত্রকে ২০০০ সালে হারানোর পর ২০১২ সালে তার ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান।