‘আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স’

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ , ০৪:০৬ পিএম


আরটিভি
ছবি : আরটিভি

বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের উদাসীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ডেডবডি’ সিনেমার নির্মাতাও কলাকুশলীরা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে এফডিসির ভিআইপি প্রজেকশন হলে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় নির্মাতা ও পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু এবং পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চিত্রনায়ক ওমর সানীসহ চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল বাংলা সিনেমার প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার নানা দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সিনেপ্লেক্স তার সিনেমা ‘ডেডবডি’কে মেরে ফেলেছেন বলেও দাবি করেন।

প্রতিবাদ সভায় ইকবাল বলেন, আমাদের বাংলাদেশের সিনেমাকে কি করে ধ্বংস করে দেওয়া যায় তার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত করছে সিনেপ্লেক্সে। তারা আমাদের দেশি সিনেমা ভালো করে চলুক তা চাচ্ছে না। এ দেশে হিন্দি সিনেমাও চলবে না।

তিনি বলেন, সিনেপ্লেক্সের অসংগতি দিনদিন বেড়ে চলছে। তারা এমন সময় বাংলাদেশের সিনেমা শো দিয়ে থাকেন তখন দর্শক সিনেপ্লেক্সে যান না। বন্ধের দিন সকাল আর রাতে বাংলাদেশের সিনেমা  চালান। শুত্রুবার ছুটির দিন সকালে আর রাতের শোতে বাংলাদেশের সিনেমা চলে। তখন দর্শক পাওয়া যায় না। অথচ পিক টাইমে বিদেশি সিনেমাগুলো চালানো হয়। এটা একটা বড় অসংগতি।

বিজ্ঞাপন

ইকবাল বলেন, আমার সিনেমা ডেডবডি ঈদে মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। লায়নস সিনেমাসসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় হলও চূড়ান্ত হয়েছিল। পরে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে ঈদে অনেকগুলো সিনেমা আসছে আমরা আপনার সিনেমা আপাতত নিতে পারছি না। আপনি ঈদের দুই সপ্তাহ পরে মুক্তি দেন। তাদের কথামতো আমি দুই সপ্তাহ পরই মুক্তি দিই। কিন্তু এখানেও তাদের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। তারা আমার সিনেমা যে হলে মুক্তি দিয়েছে সে হলগুলো আমিও চিনি না। এক কথায় তারা আমার সিনেমাকে কিল করেছে।

ইকবাল আরও জানান, সিনেপ্লেক্সে থেকে আমার সিনেমা নামিয়ে দেওয়া হয়নি। আমার ডেডবডি সিনেমা আমিই নামাতে বলেছি। তারা যে গেমটা আমার সঙ্গে খেলেছে তার প্রতিবাদেই আমার সিনেমা আমি নামাতে বলেছি। আমি যদি ঈদেও আসতাম। সিনেপ্লেক্সে যদি আমার সিনেমা না চালাতো তাহলেও আমার সিনেমার মৃত্যু ঘটত না। সুপারহিট হতো। 

পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, সিনেপ্লেক্সের শেয়ার মানি নিয়ে তো অসংগতি রয়েছেই। কলকাতার সিনেপ্লেক্সেসহ সিনেমার হলগুলো ফিফটি ফিফটি শেয়ারমানি দিয়ে থাকে। তার আমাদের এখানে প্রযোজককে খুশি মতো শেয়ারমানি দেওয়া হয়। তা আর মানা হবে না। শেয়ারমানির সমতা চাই।

তিনি বলেন, প্রযোজকরা সিনেপ্লেক্সে ফোন করলে ফোন ধরা হয় না। এসব বন্ধ করতে হবে। এসব বন্ধ করা না হলে আমরা সিনেমা দেওয়া বন্ধ করে দেবো। আর অন্যায়, অসংগতি মেনে নেওয়া হবে না।

এ সময় সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ প্রযোজকদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। এ আচরণ একজন প্রযোজকের জন্য অসম্মানজনক। আমরা টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানাই, আর আমাদের সঙ্গে যা তা আর হবে না।

তিনি বলেন, ডেডবডির সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এ সিনেমাকে এমন শো দেওয়া হয়েছে যে শোর টিকিট ৫০০ টাকা। আর অফ টাইমে শো চালানোর সিডিউল করা হয়েছে। তা ডেডবডির সঙ্গে চক্রান্ত এবং উদাসীনতা ছাড়া কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, ঈদের সিনেমা শো নিয়ে ঈদ সিনেমার পরিচালকদের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই শো কমিয়ে দেওয়া হয়। স্টার সিনেপ্লেক্স তাদের ইচ্ছে মতো সিনেমা চালান। যা বাংলাদেশের সিনেমার বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।

খসরু বলেন, আরও আগে থেকেই প্রযোজক-পরিচালকদের স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেভাবে কেউ প্রতিবাদ করেনি। যেটা ইকবাল করেছে। সিনেপ্লেক্সের নীতিমালা সিনেমা হলের নীতিমালা। সিনেপ্লেক্স সিনেমা হলের নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স পেয়েছে। সেখানে বলা আছে ৮৫ ভাগ বাংলা সিনেমা চলাতে হবে। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। ১৫ ভাগও বাংলা সিনেমা চালানো হয় না।

যোগ করে তিনি আরও বলেন, যেখানে সিনেমা হলের মালিকরা সিনেমা নিতে আসে সেখানে একজন প্রযোজককে সিনেমা নিয়ে ঘুরতে হয় সিনেপ্লেক্সের কাছে। এটা আমাদের জন্য বড় অপমানের। কখন শো সেটাও জানা যায় না। ওয়েব সাইটে গিয়ে কয়জন লোক দেখতে পারবে? বাংলা সিনেমা নিয়ে সিনেপ্লেক্সের অনীহা বরাবরই দেখছি। সকালে এবং রাতে বাংলা সিনেমার শো দেওয়া হচ্ছে। যখন দর্শক হলে যাবে না। সুপরিকল্পিতভাবে বাংলা সিনেমা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। ইকবালের সিনেমা নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে সেটি একজন প্রযোজক ও পরিচালকের জন্য লজ্জার। আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স। এ ছাড়া আরও নানা অভিযোগ তো রয়েছেই।

নীতিমালা পরিবর্তন না হলে সিনেমা না দেওয়ার হুমকি দেন খসরু। তাদের দাবি না মানা হলে প্রযোজক-পরিচালকরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মে দেশের প্রায় ৪০ হলে মুক্তি পায় এমডি ইকবাল পরিচালিত সিনেমা ‘ডেডবডি’। মুক্তির প্রথম দিনই সিনেমাটি স্টারে না চালানোর ঘোষণা দেন মো. ইকবাল। মুক্তির তিন দিনের মাথায় স্টার সিনেপ্লেক্স সিনেমাটি প্রদর্শন বন্ধ করে। ভৌতিক ধাঁচের এ সিনেমাতে  বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর সানী, রোশান, শ্যামল মাওলা, অন্বেষা, রাশেদ অপু প্রমুখ।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission