একটা জগদ্দল পাথর বুকের ওপর থেকে নেমে গেল: আবুল হায়াত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে গতকাল দুপুরে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশের একটি গণমাধ্যমে একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, অনেক দিন পর ছেলেমেয়েরা কাঁদাল। সবার সঙ্গে আনন্দে কাঁদলাম। কী এক আনন্দ, আমি আপ্লুত হয়ে গেছি। বারবার। মনে হলো দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম। দেশবাসীর জন্য এ বিরাট আনন্দের খবর। আবার বিষাদের ছায়াও ছিল মনজুড়ে। এই যে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে প্রাণ দিল, তাদের কথা প্রতি প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ছে। সফল এই দেশ গঠনের আন্দোলনে শিক্ষার্থী-জনতা যারা ছিল, সবাই আমাদের অহংকার। দুপুর থেকে শিক্ষার্থীদের দুঃসাহসী অর্জনের কথা ভেবে, একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছে, টুপিখোলা অভিবাদন তোমাদের। তোমরা জাতির জন্য যা করেছ, যা বলেছ, সেটা আর কেউ বলতে পারছিল না। তোমরা আমাদের গর্বিত আগামী।
স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই যে শত শত প্রাণের বিনিময়ে ২০২৪–এ আবার স্বাধীনতা পেলাম, এটা যেন আর নষ্ট না হয়। এবার যেন আমরা যুক্তিযুক্তভাবে সবকিছু ব্যবহার করতে পারি। কারণ, এর পেছনে আমাদের এবারও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। আমরা আর কোনো নৃশংসতা চাই না। আমরা স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে চাই। দীর্ঘ কয়েকটা বছর আমরা যে সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি, সেখানে মানুষ ভাবতেও ভয় পেত। বলা বা চিন্তা তো দূরের কথা। সে জায়গা থেকে ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদের নতুন দিন দেখাল, আমাদের মুক্তি দিল।
এই অভিনেতা বলেন, আবার বলার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, পড়ার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতাকে কেউ যেন ভন্ডুল না করে। তাহলেই আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারব। স্বাধীন দেশের কাছে এটাই বড় চাওয়া। বেশ ভালো লাগছে, একটা জগদ্দল পাথর বুকের ওপর থেকে নেমে গেল।
স্মৃতিচারণ করে আবুল হায়াত আরও বলেন, আজ বারবার সেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের কথা মনে পড়ছে। যেদিন আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। সেদিন ভিড়ের মধ্যে রাস্তায় নেমে গিয়েছিলাম। তখন কোথায় কে মুক্তিযোদ্ধা যাচ্ছে, তাদের চিনি না কিন্তু দৌড়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেদিনটি আজ চোখের সামনে ভাসছে। স্বাধীন দেশে যখন আমাদের মন্ত্রীরা আসল, ছুটে গেছি একেকজনকে দেখার জন্য। বিমানবন্দরে মালা নিয়ে গেছি।
সবশেষে তিনি বলেন, ১৯৭১–এ কীভাবে আমরা ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেলাম, সেই দিনগুলো অশ্রুসিক্ত করছে। তারপর আমাদের কপাল খারাপ, পাথর আমাদের বুকের ওপর একের পর এক চেপে বসল। আজ সেই বিজয়ের আনন্দ কাঁদাচ্ছে। আমি কিছুটা অসুস্থ। শরীরে যন্ত্রণা হয়। অনেক কষ্ট হয়। সেই কষ্টটা আমি বিজয়ের আনন্দে ভুলে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমি সুস্থ মানুষ। আজ গর্বের দিন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন এই গুণী অভিনেতা।
মন্তব্য করুন