• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১
logo

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ নিয়ে নির্মাতাদের প্রত্যাশা

  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৩২
সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র। আর এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পর তা মুক্তির অনুমতি মেলা থেকে শুরু করে সিনেমা হল পর্যন্ত যাওয়া যেন এক যুদ্ধ। বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে সেন্সর বোর্ড ছিল এক গলার কাঁটা। দেশের বেশির ভাগ নির্মাতা, প্রযোজক ও শিল্পীর দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল সেন্সর বোর্ড বাতিল হওয়া। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেন্সর বোর্ড বাতিল করে বিগত সরকারের আমলে সার্টিফিকেশন বোর্ড আইন পাস করা হয়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার কেবল সদস্য বদলের মাধ্যমে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফের পুরনো সেন্সর বোর্ডকেই পুনর্গঠন করে। মূলত, এরপর চলচ্চিত্র সমাজ থেকে তুমুল প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। বোর্ড থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও সদস্য মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

সেন্সর বোর্ড নিয়ে যখন এমন টালমাটাল অবস্থা তখন রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড’ থেকে ‘সেন্সর’ শব্দটি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘সার্টিফিকেশন’। এখন এর নাম দাঁড়িয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’। এটি পুনর্গঠনের খবর প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

১৫ সদস্যবিশিষ্ট চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে বোর্ডের সদস্যসচিব করা হয়েছে।

চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব; প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র); জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার প্রতিনিধি; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি।

এ ছাড়াও রয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক ড. জাকির হোসেন রাজু; চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেল; চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, লেখক ও সংগঠক জাহিদ হোসেন; চলচ্চিত্র সম্পাদক ইকবাল এহসানুল কবির; চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান; চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক তাসমিয়া আফরিন মৌ।

এদিকে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে আরটিভির সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন নির্মাতা জানিয়েছেন তাদের প্রত্যাশার কথা।

নির্মাতা দীপংকর দীপন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে বলেন, এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি ভালো খবর। কিন্তু শুধু নাম পরিবর্তন করলেই তো হবে না। নামের পাশাপাশি কাজও করতে হবে। আগে সেন্সর বোর্ডের কারণে অনেক সিন গল্পের প্রয়োজনে থাকলেও তা দেখাতে পারিনি। যেমন কোন পেশজীবীদের বিরুদ্ধে কিছু দেখাতে পারতাম না। পাশাপাশি গল্পের প্রয়োজনে এডাল্ট সিনও দেখাতে পারতাম না। তবে এখন আশাকরি একজন নির্মাতা স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন। আর চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নাম হলেই যে একেবারে সেন্সর থাকবে না, তা ভাবাও আবার ভুল। কারণ, সেন্সর না থাকলে তো আবার অনেকেই পর্ন ভিডিও বানিয়ে চালিয়ে দিবে। তাই আমি বলব, অবশ্যই যতটুকু প্রদর্শন করা যায় ততটুকু রেখে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া।

চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের অন্যতম সদস্য হয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান । তিনি বলেন, ৫৪ বছরে আসলে যা হয়নি এখন, সেটি হয়েছে। আমরা এত বছর পর নাম পরিবর্তন করে শুরু করেছি। আর এই নাম করনের সার্থকতা যদি ধরে রাখতে পারি মানে ২০২৪ সালে হলিউড, বলিউড যেভাবে কাজ করে সেইভাবে যদি আমরা সার্টিফিকেশনের বিধিগুলো তৈরি করে। সেগুলো সবাই মিলে গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। আর আমরা যদি আইন পরিবর্তন করে বিধিগুলো বদলে কাজ করতে পারি তাহলে আমাদের ওপার সম্ভাবনা আছে। আমরা চাই আমাদের সিনেমা বাংলাদেশের গল্পের সিনেমা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আমার প্রত্যাশা অনেক। আমি চাই আমার দেশের নির্মাতারা সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে বেড়াবে। এত এত বাঁধার পরেও বাংলাদেশের নির্মাতারা কোথায় যায়নি? মস্কো, বার্লিন, টরেন্টো কোথায় না গিয়েছে? আর আমাদের যদি বাঁধা খুলে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কি না করতে পারব!

তিনি আরও বলেন, আমি চাই আমাদের এই চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড যেন সঠিক দিক নির্দশনার দিকে এগিয়ে যায়। আমরা যেন এর নামকরণের সার্থকতা নিশ্চিত করতে পারি। পাশাপাশি নতুন আইনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সকল অঙ্গনের উন্নয়ন করতে পারি সবার সহযোগিতার মাধ্যমে। যদি এই কাজ যথাযথভাবে সততার সঙ্গে আমরা করতে পারি, তাহলে নিজেকে এই বোর্ডের যৌক্তিক অংশ মনে হবে।

চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে পক্ষে থাকলেও ভিন্ন কথা বলছেন নির্মাতা বদিউল আলম খোকন। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নির্মাতা বলেন, এই সেন্সর বোর্ডের নাম পরিবর্তনসহ এর নানা কিছু নিয়েই আমাদের প্রয়াত নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন ভাই আন্দোলন করে আসছিল। যাক, অবশেষে সেটি হলো। কিন্ত উপদেষ্টার কাছে আমার প্রশ্ন, তিনি কী কখনো সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন? দেশের সিনেমা হলের পরিবেশ সম্পর্কে কী তার ধারণা আছে? চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড হলো সিনেমা দেখার পর গ্রেডিং দিয়ে ছেড়ে দেওয়া। আর সেই গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতেই সিনেমা হলে ছবি মুক্তি পাবে। আমার প্রশ্ন হলো আমাদের দেশে এখন সিনেমা হল আছে কয়টা? তাছাড়া আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণও কম হচ্ছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে শুধু চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড মানে নাম পরিবর্তন করলেই হবে না। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সিনেমা হল নির্মাণেও পদক্ষেপ নিতে হবে। মোট কথা সবগুলো বিষয় একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।

চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড চলচ্চিত্রের কল্যান বয়ে আনবে উল্লেখ করেই নির্মাতা রায়হান রাফি বলেন, আমরা এটিই চাচ্ছিলাম। নির্মাতা হিসেবে আমরা স্বাধীনতা চাই যেনো আমরা স্বাধীনভাবে সব ধরনের গল্পে কাজ করতে পারি। এখন হয়তো আগের মতো গণহারে কোনো দৃশ্য ব্লার করে দিতে হবে না, স্বাধীনতাভাবে আমরা আমাদের গল্প বলতে পারব। অন্যান্য দেশের মত যেহেতু এখন আমাদের দেশেও এখন এই সিস্টেম চালু হয়েছে সুতরাং অবশ্যই একজন স্বাধীন নির্মাতা হিসেবে আমি সাধুবাদ জানাই এই উদ্যোগকে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড পুনর্গঠন নিয়ে অসন্তোষ!
চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে থাকছেন যারা
সেন্সর বাদ, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড পুনর্গঠন
যে কারণে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে’ থাকার প্রস্তাব ফেরালেন শবনম