ডিবি হারুনের যে লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ছিলেন নির্মাতা সুমন
১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতের কথা, ঢাকা থেকে রাতে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন ইয়াসমিন নামে এক কিশোরী। বাসের স্টাফরা ভোররাতে তাকে দিনাজপুর-দশমাইল মোড়ে এক চায়ের দোকানদারের জিম্মায় দিয়ে সকাল হলে দিনাজপুরগামী বাসে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি পুলিশের টহল পিকআপ আসে। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে মেয়েটিকে পিকআপে তুলে নেয়। পথে কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় মহাসড়কে।
এ ঘটনা কেন্দ্র করে সৃষ্ট দিনাজপুরবাসীর প্রতিবাদ আন্দোলনে ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট দিনাজপুর ছিল উত্তাল। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাত আন্দোলনকারী। আহত হন দুই শতাধিক। দিনাজপুরসহ সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ইয়াসমিনের গল্পটি সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন নির্মাতা সুমন ধর। আর ইয়াসমিনের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল বিদ্যা সিনহা মিমের। ছবির নাম রাখা হয়েছে— ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’। গত বছর এসেছিল খবরটি। শিগগিরই শুটিং করার কথা জানিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।
‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ সিনেমাটি নির্মাণের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় ডেকে নিয়ে নির্মাতা সুমনকে ছবিটি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইয়াসমিনের জীবন নিয়ে সিনেমা না বানিয়ে বরং অন্য কোনো গল্পে তাকে সিনেমা বানানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশীদ। গল্প ও পৃষ্ঠপোষকও তিনি ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন।
তরুণ নির্মাতার জন্য এই বাজারে ‘প্রযোজক’ ও ‘স্পন্সর’ পাওয়া সত্যিই কঠিন। ডিবি হারুনের এই ‘দারুণ অফার’ কেন গ্রহণ করলেন না নির্মাতা সুমন ধর? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রফেশনাল প্রডিউসার ছাড়া কাজ করি না। ওরা তো সরকারি লোক, স্পন্সর ম্যানেজ করে দিতে চেয়েছিল। আমি কখনো রাষ্ট্রের টাকায় সিনেমা বানাতে চাইনি, তাই আবেদনও করিনি। আমার একটা সিনেমা অনুদানের জন্য জমা দিয়েছিল চ্যানেল আই। আমি নিজে কখনও দিইনি। এসব কারণে ওই অফার আমি গ্রহণ করিনি।’
সম্প্রতি সেসময়ের ঘটনা ভাগাভাগি করেন সুমন ধর। তিনি জানান, ফোন করে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা জায়েদ খান। এই তরুণ নির্মাতাকে জায়েদ খান বলেছিলেন, ‘হারুণ ভাই আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে তুলে নিয়ে আসতে। তুমি আমার পরিচালক সমিতির সদস্য, তাই সেটা করিনি। তুমি ছোট মানুষ, পরিচালনা করো, হারুন ভাইকে রাগানো ঠিক হবে না। তুমি এ রকম একটা গল্প নিয়ে কেন কাজ করবা?’
গোয়েন্দাপ্রধান হারুনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ ছবিটি আবারও শুরু হচ্ছে। সেসময় নায়িকা হিসেবে মিমের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় নায়িকার চরিত্রটি তিনিই করছেন। খোঁজা হচ্ছে নায়ক। ছবিটি করবেন বলে সেসময় নাটকের কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন সুমন। দীর্ঘ সময় ধরে করেছিলেন গবেষণা ও চিত্রনাট্য তৈরির কাজ।
ঠিক কী কারণে ছবি বন্ধ করতে বলেছিলেন ডিবি হারুন? জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘তিনি এটুকুই বলছিলেন, এই ছবি করা যাবে না। একজনকে ডেকে বললেন, আমাদের কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবে, সেটা দিয়ে দেবেন। তার যদি স্পন্সর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেব।
নির্মাতা সুমন বলেন, ‘সিনেমার জন্য ২০১৭ সালে লেখা গল্পটা আপডেট করার চেষ্টা করছি। ছবিতে মিম থাকবে, কথা হচ্ছে আরও অনেকের সঙ্গে। তবে এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে কোন কোন আর্টিস্ট থাকবে।’
আরটিভি /এএ
মন্তব্য করুন