একুশে পদকপ্রাপ্ত ও চিরসবুজ খ্যাত অভিনেতা আফজাল হোসেন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই এই গুণী অভিনেতা লেখালেখি করেন ফেসবুকে। এবার তার ওয়ালে দেখা গেল এমনই একটি পোস্ট যেখানে অভিনেতা বলেছেন, ছোট্ট আছিয়া সামান্য কয়দিনের দুনিয়াদারী করতে এসে বুঝে গেল, এটা নরক। ভালো করেই জেনে গেছে, মানুষ নামের মানুষে জগৎ সয়লাব- আসল মানুষ তেমন নেই।
বাঁচানো যায়নি মাগুরায় নির্যাতিত সেই শিশুটিকে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা মাগুরায় শিশুটি মারা যায় বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ)। এদিন দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আছিয়ার শোকে গোটা দেশবাসী শোকে মুহ্যমান। শোক ছুঁয়ে গেছে অভিনেতা আফজাল হোসেনকে।
শনিবার (১৫ মার্চ) নিজের ফেসবুকে অভিনেতা লিখেছেন, ছোট্ট আছিয়া সামান্য কয়দিনের দুনিয়াদারী করতে এসে বুঝে গেল, এটা নরক। ভালো করেই জেনে গেছে, মানুষ নামের মানুষে জগৎ সয়লাব- আসল মানুষ তেমন নেই।
এরপর লেখেন, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও আরও এক দফা বুঝিয়ে দিলেন, শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের কৃতজ্ঞতা বা গৌরববোধ নেই- তার বদলে নানা প্রকারে মানুষ প্রমাণ দিতে চায়, কতটা নিকৃষ্ট তারা হতে পারে!
অভিনেতার কথায়, চলে গেল আছিয়া। জীবিতকালে তাকে সন্মান দেখাতে না পারি, মৃত্যুর পর অনেকটাই বোঝাতে পেরেছি, সন্মান দেখানোয় আমরা কতটা দক্ষ, আন্তরিক। দুঃখজনক হচ্ছে, দক্ষতা, আন্তরিকতা প্রকাশ করতে আমাদের কোনো না কোনো উপলক্ষ্যের প্রয়োজন পড়ে।
তিনি যোগ করেন, নিপীড়ন, অত্যাচার, অবমাননায় কারও মৃত্যু হলে- তখনই সে জীবন সন্মান, মর্যাদাপ্রাপ্তির উপযুক্ত হয়ে ওঠে। তখনই কেবল সে জীবনের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদর্শনের তাগিদ অনুভব করি। আমরা এই মানুষ পরিচয়ের প্রাণীরা অসভ্যতা, বর্বরতায় খুব একটা বিব্রত, পীড়িত, অসন্মানিতবোধ করি না- বয়স বিবেচনায় বর্বরকাণ্ডে সমাজসহ শিউরে উঠি।
তার কথায়, কোনো লজ্জা, ঘৃণা বা অতিরিক্ত বেদনার ঘটনা কেউ বেশিদিন মনে রাখে না। আছিয়াকেও মনে থাকবে না কারও কিন্তু নিজের জীবনের বদলে মানুষ ও সমাজের কুৎসিত রূপ সে খুব বড়, স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়ে গেল। বুঝিয়ে দিয়ে গেল, তার জন্ম হয়তো সাধারণ ঘটনা ছিল কিন্তু ছোট্ট সে জীবন মানুষের দায়িত্ব কর্তব্যে নয়, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতাতেই বিশেষ হয়ে উঠতে পেরেছে।
সবশেষে লিখেছেন, নিকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠত্বের মাঝখানে ভেদ যে বিশেষ নেই, তা কি বোধগম্য হয়েছে আমাদের? হবে কোনোদিনও?
আরটিভি/এএ