ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১

পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে মিছিল, শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে নয় কেন?

মো. আরিফ

শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫ , ০৭:০৭ পিএম


loading/img
প্রতীকী ছবি

ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের বাচ্চার ছবিটা যতবার চোখের সামনে আসে, বুকটা ধক করে ওঠে। মনের অজান্তেই চোখের কোনে পানি এসে যাচ্ছে! এ কেমন বর্বরতা! এই শিশুটি তো কারও সন্তান, কারও আদরের ধন! কিন্তু এই সমাজ কি তাকে রক্ষা করতে পেরেছে? আমরা কি পারছি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পৃথিবী দিতে? এ কোন সমাজ? যেখানে সিগারেট খাওয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন হয়, কিন্তু শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাজপথে কেউ নামে না? যেখানে পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে মিছিল হয়, কিন্তু আট বছরের নিষ্পাপ শিশুটির জন্য একটি প্রতিবাদও হয় না? আমাদের সমাজ কি এতটাই পাষাণ হয়ে গেছে?

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী, ১৬ বছরের নিচে কোনো শিশুকে ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাই যে এই শাস্তিগুলো যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে?

আমাদের আদালতে ধর্ষণের মামলাগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকে। ভিকটিম বিচার পায় না, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এত বড় বড় আইন থাকা সত্ত্বেও কেন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে? আইন শুধুই কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে! 

বিজ্ঞাপন

আইন কেবল কাগজে থাকলে চলে না, তার যথাযথ বাস্তবায়নই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে ক্ষমতাবান অপরাধীরা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আর নির্যাতিত পরিবারগুলো বার বার সমাজের চোখে কলঙ্কিত হয়! 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের শাস্তি ও ধর্মীয় বিধান প্রায় সমান। ইসলাম, খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রায় সকল ধর্মে এই অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি হলো পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা বা ফাঁসি।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—‘ধর্ষকের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে, যেন সে অন্যদের জন্য শিক্ষা হয়’ (সূরা আন-নুর, ২৪:২)।হাদিসেও উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি ধর্ষণ করবে, তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তার দেহ থেকে প্রাণ বের করে দেওয়া হবে যেন সে আর কখনো এই জঘন্য কাজ করতে না পারে। যদি আমরা ইসলামের কঠোর বিধান মেনে চলতাম, তাহলে সমাজে এইসব ভয়ংকর অপরাধ করার আগে অপরাধীরা একশবার ভাবত। 

খ্রিষ্টান ধর্মে- বাইবেলে ধর্ষণের শাস্তি কঠোরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। লেবীয় পুস্তক ২০:১০-১৬ অনুযায়ী, ধর্ষকের শাস্তি পাথর নিক্ষেপে হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড।

হিন্দু ধর্মে- মনুস্মৃতি (৮:৩২৩) অনুযায়ী, ধর্ষকের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মহাভারতে ধর্ষণকারীদের জন্য অঙ্গচ্ছেদ (অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা) অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। 

বৌদ্ধ ধর্মে ধর্ষণকে অন্যতম গুরুতর পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। "পঞ্চশীল" অনুযায়ী, ধর্ষণকারী পুনর্জন্মে চরম শাস্তি পাবে এবং নরকে যাবে। অনেক বৌদ্ধ রাষ্ট্রে ধর্ষণের শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। 

পৃথিবীর সকল ধর্মেই এই ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি কার্যকর করার ব্যাপারে বলছে, তাহলে আমরা ঠিক কোন মানবতাই এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পারিনা? 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যদন্ড, এর ফলাফলে তাদের দেশের ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায়! 

সৌদি আরব- ধর্ষণের শাস্তি শিরশ্ছেদ (শরীয়াহ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড)। কিছু ক্ষেত্রে জনসমক্ষে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। এই কঠোর শাস্তির কারণে সৌদি আরবে ধর্ষণের হার অত্যন্ত কম।

চীন- ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিছু ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদণ্ডের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। চীনে ধর্ষণের জন্য অনেক অপরাধীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইরান- শরীয়াহ আইন অনুযায়ী ধর্ষণের জন্য ফাঁসি বা শিরশ্ছেদ। কিছু ক্ষেত্রে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়, যাতে এটি অপরাধীদের জন্য সতর্কবার্তা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই)- ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অনেক ক্ষেত্রে শরীয়াহ আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে শাস্তি দেওয়া হয়।

তাহলে ভাবুন তো! ঠিক কী কারণে আমাদের দেশের ধর্ষণকারীরা এখনো ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করতে সাহস পায়! এটা আমাদের দেশের সরকারের উদাসীনতা ছাড়া কিছুই না! 

আমাদের সমাজের কি কিছুই করার নেই এই ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে? এটা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব এই দানবদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমরা যদি চুপ থাকি, তাহলে একদিন আমাদের সন্তানরাও এই নির্মমতার শিকার হবে! ধর্ষণের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। "যাবজ্জীবন" নয়, ধর্ষকের ফাঁসি চাই—তাও প্রকাশ্যে, যাতে অন্যরা শিক্ষা নেয়। ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আরও শক্তিশালী করতে হবে। শিশুরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে—পরিবারকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। ধর্ষকদের সামাজিকভাবে একঘরে করতে হবে। কেউ ধর্ষককে সমর্থন করলে, তাকেও অপরাধীর তালিকায় ধরতে হবে। 

আজ যারা চুপ করে আছে, তারা জেনে রাখুক—এই অপরাধীদের হাত থেকে তাদের সন্তানও নিরাপদ নয়। একদিন হয়ত এই নির্মমতা তাদের ঘরেও আসবে! আমরা কি তখনও চুপ থাকবো? না, আমরা প্রতিবাদ করবো! আমরা চাই তৎক্ষণাৎ শাস্তি, চাই ন্যায্য বিচার!

একটা ৮ বছরের নিষ্পাপ শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, অথচ সমাজ চুপ! আমরা এই নির্লজ্জ সমাজের বিরুদ্ধে, আমরা সুবিচার চাই! 
ধর্ষকদের জন্য একটাই শাস্তি—ফাঁসি চাই! 

লেখক: ডেপুটি ম্যানেজার, ডিএসএম, আরটিভি 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |