ঢাকারোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ন্যায় অন্যায় প্রকৃতিকেও স্পর্শ করে

মাজহার খন্দকার

রোববার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ১১:১৩ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি

প্রকৃতি বলতে সমগ্র সৃষ্টিজগৎকেই বোঝায়। বহু দৃশ্য-অদৃশ্য বিষয় এবং জীবন ও প্রাণ নিয়েই এই প্রকৃতি। সাধারণভাবে অনুভূতি প্রকাশ করে না বলেই প্রকৃতিকে প্রাণহীন মনে করা হয়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বিজ্ঞান বলে প্রকৃতিরও প্রাণ আছে। বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এ কথা প্রায় ১শ ১৫ বছর আগে প্রমাণ করেছেন। তার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিটি বৃক্ষের রয়েছে অনুভূতি, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় সে উৎফুল্ল হয়।

জার্মান পরিবেশবিদ পিটার ওলেনবেন তাঁর সাড়া জাগানো দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিজ গ্রন্থে জগদীশ চন্দ্র বসুর বলা সে কথাটাই নতুন করে আরও ব্যাখ্যা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি নিজ গতিতে খুবই সুশৃঙ্খল, সংবিধিবদ্ধ ও ক্রিয়াশীল। তার চিরন্তন নিয়মে কখনো ব্যত্যয় ঘটে না। তবে মানুষ যখন তার স্বাভাবিক ক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করে তখনই কিন্তু সে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়াটি দেখায়।

প্রকৃতির সবেচেয় সুবিধাভোগী মানুষ হলেও তা শর্তহীন ও অবারিত নয়। যদি নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটায়, অনিষ্ট করে তাহলে নিরব প্রকৃতি বিরূপ আকার ধারন করে। যা প্রকৃতির নিয়মেই মাহাকল ধরে হয়ে আসছে, সেটি কখনও ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় আবার কখনও শুধুই জানান দেয়।  তবে মানুষ যখন সৃষ্টির প্রথাগত নিয়মে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তখন এই বিশ্বচরাচর গতিশীল, শান্তিময় ও আনন্দঘন হয়ে ওঠে।

১৭৯৮ সালে ইতালীয় ধর্মযাজক এবং অর্থনীতিবিদ টমাস রর্বাট ম্যালথাস তার থিউতে বলেছেন, মানুষের অনাচারে যখন এ বিশ্ব অতিষ্ঠ হয়ে যায়, তখন মানুষের ওপর প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

বিজ্ঞাপন

এ সবই তো হলো মনীষী এবং বিজ্ঞানীদের কথা। যদি ধর্মের বাণীর দিকে তাকাই তাহলে দেখবো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সুরা ওয়াকিয়ার ৭২ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘তোমরা কি এই বৃক্ষরাজি সৃষ্ট করেছ, নাকি আমি সৃষ্টি করেছি’। আবার সূরা ফুরকানের ৬১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কল্যাণময় তিনি, যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন যাতে সূর্য ও আলোকোজ্জ্বল চন্দ্রও স্থাপন করেছি’। আবার সূরা বাকারার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দেন এবং তা সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন। তিনি সব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।

বিজ্ঞাপন

এরকম অসংখ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ তার সৃষ্টি জগতের বর্ণনা করেছেন। আবার এই সৃষ্টিজগতকে যে সঠিকভাবে রক্ষাণাবেক্ষণ করতে হবে তারও জন্যও বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি তার ব্যত্যয় হয় তাহলে তার পরিণতিও ভোগ করতে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠিকে তিনি কিভাবে শাস্তি দিয়েছেন তার অসংখ্য উদাহরণও তিনি কুরআনে দিয়েছেন। সূরা হজের ৪৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি বহুজাতিকে ভালোভাবে বেচে থাকার সুযোগ দিয়েছি। অথচ তারা ছিল পাপিষ্ঠ জাতি। অবশেষে তাদেরকে পাকড়াও করেছি এবং অবশ্যই আমার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে’।

আমরা যদি হজরত নূহ (আ.) কিস্তির বিষয়টির দিকে তাকাই তাহলে দেখবো মানুষ যখন পাপে জর্জরিত হয়ে পড়ে তাখনই মহা প্লাবনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর ওপর আজাব নেমে আসে। এরকম মহাপ্লাবন বিশ্বে একবারই হয়েছিল। যার কথা ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থে আছে। আবার হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থসমূহেও এমন প্লাবনের কথা পাওয়া যায়।

প্রকৃতির রক্ষক হওয়ার বদলে যখন মানুষ তার ভক্ষক হয়ে দাঁড়াই, তখন তার ফল কী ভয়াবহ হতে পারে তার অনেক উদাহরণ অতীতে আছে। এবার হয়তো আরেকটি উদাহরণ এই করোনাভাইরাস। এই অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের মুখে। করোনার সাথে প্রকৃতির কি সম্পর্ক এই প্রশ্ন আসতে পারে। যদি প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় নতুন নতুন রোগের জন্ম হতে পারে তাহলে ভাইরাসের বিষয়টি কি হালকাভাবে দেখা যায়?

শত শত বছর ধরে মানুষ ক্রমেই প্রকৃতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করছে। বন কেটে বানিয়েছে নগর, ভূগর্ভ থেকে হরণ করছে গ্যাস, তেল ও কয়লা। নদীপথ পরিবর্তন করে নির্মাণ করছে অতিকায় বাঁধ। পাহাড় কেটে যেমন করা হচ্ছে সমতল তেমনি সমতলে করা হচ্ছে অট্টালিকার পাহাড়। সমুদ্র শাসন করে বানানো হয়েছে বিলাসবহুল দ্বীপ। শুধু কি তাই, মরণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এসব অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

প্রাণীবৈচিত্র রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের এক হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের কারণেই  প্রতিনিয়ত আবাসস্থল হারাচ্ছে লাখ লাখ প্রাণী। এতোসব ঘটনায় বিশ্ব হয়তো  আর সইতে পারছিল না।  প্রকৃতি একসময় প্রতিশোধ নিতে পারে এটি যেমন অনেক দার্শনিক আগে থেকেই বলে আসছিলেন, তেমনি ধর্মের বাণীও বলে যে পাপীরা যখন সীমা লঙ্ঘন করে তখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই হয়।বর্তমানের এই মহামারি বা শাস্তির জন্য আমরা হয়তো প্রস্তুত ছিলাম না, কিন্তু বিশ্ব ছিল ঠিকই প্রস্তুত।

মাজহার খন্দকার

সাংবাদিক

ইমেইল: majharxyz@gmail.com

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |