নেতানিয়াহুর বেডরুমে আঘাত হানে হিজবুল্লাহর ড্রোন
লেবানন থেকে হিজবুল্লার ছোড়া একটি ড্রোনের বিস্ফোরণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সেসারিয়ার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় সমুদ্রতীরবর্তী শহর সেসারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোনটি আঘাত হানে।
ওই সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ড্রোনটি সেসারিয়ায় আঘাত হেনেছে আর তা নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু ড্রোনটি সরাসরি নেতানিয়াহুর বাড়িতে আঘাত হেনেছে কি না, তা পরিষ্কার করে জানায়নি।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছিল, লেবানন থেকে ছোড়া ওই ড্রোন ‘একটি ভবনে আঘাত হেনেছে’।
টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি নিয়ে খবর প্রকাশের অনুমতি দেয়। ড্রোনের আঘাতে বাড়িটির একটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন একটি ছবি এর আগে প্রকাশ করতে দেয়নি তারা।
বিস্ফোরণে নেতানিয়াহুর বাড়ির বেডরুমের জানালার কাঁচ ফেটে যায়, কিন্তু পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। বিস্ফোরণের আঁচ ঘরের ভেতর পৌঁছায়নি। বুলেটপ্রুফ কাঁচ ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি ভিডিওতে ওই ড্রোনের বিস্ফোরণে ভবনের বাইরের দিকে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা গেছে। ভবনের পাশে লাইন দিয়ে সাজানো গাছগুলোর মাথা উড়ে গিয়ে সামনের উঠানে ও কাছের সুইমিংপুলে পড়েছে। সেখানে কিছু কাঁচের টুকরাও ছিল বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।
সামরিক বাহিনীর সেন্সরকৃত একটি ছবিতে হিজবুল্লাহর শনিবারের ড্রোন হামলায় নেতানিয়াহুর বাসভবনে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে চিত্র উঠে এসেছে। বিস্ফোরণের কারণে তার বেডরুমের একটি জানালার কাঁচ ফেটে যায়। তবে জানালা ভেদ করে তা তার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। সম্ভবত শক্তিশালী কাঁচ ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এমনটা হয়েছে। তবে কাঁচের টুকরো পাশের সুইমিং পুল ও আঙ্গিনায় গিয়ে পড়ে।
গত শনিবার ইসরায়েলের সিজারিয়া শহরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা হয়। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের উত্তরে সিজারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাসভবনে লেবানন থেকে উড়ে আসা একটি ড্রোন আঘাত হানে বলে তার মুখপাত্র জানান। তবে এই হামলায় কেউ আহত হয়নি এবং ঘটনার সময় নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুকে লক্ষ্য করে পরিচালিত তার বাসভবনে হামলার দায় সম্পূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ ও এককভাবে নেয়ার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তবে এর সঙ্গে ইরানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।
এ নিয়ে বাসভবনে হামলার দিনই কথা বলেন নেতানিয়াহু। তার দাবি, তাকে ও তার স্ত্রীকে মারতেই এই হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো যারা আজ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা একটা বড় ভুল করল।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সারাহ নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে হত্যার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা শুধু আমাদের দুজনের ওপর হামলা নয়। এটা আমাদের সবার ওপর হামলা, ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর হামলা, আমাদের মূল্যবোধের ওপর হামলা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, শনিবার লেবানন থেকে তিনটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। যার মধ্যে দুটি গুলি করে নামানো হয়। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।
তবে এই ঘটনাটি ইসরায়েলের সতর্কতা ব্যবস্থার বেশ কয়েকটি ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। সিজারিয়ায় ড্রোন প্রবেশের সময় কোনো সতর্কতা সাইরেন বাজেনি। আইডিএফের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, দুটি ড্রোন গুলি করে নামানোর পর তৃতীয়টি তাদের রাডার থেকে হারিয়ে যায়। ড্রোনগুলো ধ্বংস করার জন্য আক্রমণকারী হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি তৃতীয় ড্রোনটি শনাক্ত করতে পারেনি।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন