ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে চায় ইউক্রেন, ট্রাম্প কি রাজি?
ইউক্রেনের দাবি, যে এলাকাগুলি রাশিয়ার দখলে নয়, কেবল সেই এলাকাগুলিকে ধরে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হোক। বাস্তবে তা সম্ভব।
ন্যাটোর সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে অন্য সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে সাহায্য আশা করতে পারে। একইভাবে অন্য দেশগুলির কাছ থেকে অস্ত্র সাহায্যও প্রত্যাশা করতে পারে দেশটি। তবে কীভাবে এবং কতটা সাহায্য করা হবে, তা নির্ণয় করার ক্ষমতা থাকবে সাহায্যকারী দেশটির হাতে। আর ঠিক এই সুবিধাটিই খাতায় কলমে পেতে চাইছে ইউক্রেন। রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর আমেরিকাসহ একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে ইউক্রেন। কিন্তু ন্যাটোর সদস্য হলে সাহায্যের গ্যারান্টি পাওয়া সম্ভব। এবার সেই রাস্তায় হাঁটতে চায় ইউক্রেন। ইতিমধ্যেই এবিষয়ে তাদের দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভেলাদিমির জেলেনস্কি।
প্রশ্ন হলো, ইউক্রেনের এই দাবি কি ন্যাটোর সদস্য দেশগুলি মেনে নেবে? ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে হলে ৩২ টি দেশেরই সম্মতি প্রয়োজন।
ইউক্রেনের দাবি জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলি দখল করে রেখেছে, বিশেষ করে ক্রাইমিয়া- সেই এলাকাগুলিকে ন্যাটো থেকে বাদ দেওয়া হবে। কেবলমাত্র স্বাধীন ইউক্রেনের অংশকেই ন্যাটোর অংশ করা হোক। বাস্তবে কি তা সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ন্যাটো তৈরি হয়, তখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত। কেবলমাত্র পশ্চিম জার্মানিকেই ন্যাটোর অংশ করা হয়েছিল। পূর্ব জার্মানি ছিল সোভিয়েত অ্যালায়েন্সের অংশ।
এখানেই শেষ নয়, দক্ষিণ প্রশান্ত সাগরে যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু দ্বীপ আছে, ক্যারিবিয়ান আইসল্যান্ডে বেশ কিছু অঞ্চল ফ্রান্সের দখলে, কিন্তু ওই এলাকাগুলি ন্যাটোর আওতাভুক্ত নয়। কেবলমাত্র ফ্রান্সের এবং যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ড ন্যাটোর অংশ। ফলে জেলেনস্কি যে ২৭ শতাংশ জমি ছেড়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর অংশ করার দাবি তুলেছেন, তা বাস্তবে অসম্ভব নয়। যারা মানতে নারাজ প্রশ্ন হলো পশ্চিমা দেশগুলি এবং আমেরিকা কি ইউক্রেনকে এখনই সদস্য করতে আগ্রহী। ইউক্রেন সফরে গেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস।
তিনি সরাসরি এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। জার্মানির বক্তব্য, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিলে বাকি ৩২টি দেশও সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়বে। এই মুহূর্তে তা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।
তবে ন্যাটোর সাবেক প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ মনে করেন, ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতেই পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্ভব। ট্রাম্প কী চান আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী চান, তা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
এবিষয়ে ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। তবে নির্বাচনি জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কোন প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব হবে, সে কথা তিনি বলেননি।
ইউক্রেনযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জো বাইডেন প্রশাসন লাগাতার ইউক্রেনকে সাহায্য করে গেছে। ট্রাম্পও কি একইভাবে সাহায্য চালিয়ে যাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ন্যাটোর বর্তমান প্রধান অবশ্য বলেছেন, শান্তি আলোচনার সময় এটা নয়। রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপন কীভাবে সম্ভব, সে কথা না ভেবে এখন উচিত ইউক্রেন।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন