মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ১৭০ স্বজন-প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ এক ইমাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ 

বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ , ০৩:৪৯ পিএম


মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ১৭০ স্বজন–প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ এক ইমাম
ফাইল ছবি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে শুক্রবার (২৮ মার্চ) ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচে এখনও শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। এতে মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ১৭০ স্বজন-প্রিয়জনকে হারিয়ে বলে জানিয়েছে ‍বিবিসি।   

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মসজিদগুলো তখন লোকে লোকারণ্য। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি শুরু হয়। ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো মিয়ানমার ও আশপাশের কয়েকটি দেশ। ভূমিকম্পে সাগাইংয়ে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে সেখানকার সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমাও রয়েছে। ধসে পড়া তিনটি মসজিদের ভেতরে থাকা অনেক মুসল্লি নিহত হয়েছেন। কয়েকশ কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে বসে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠেন মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাইও।

পরের কয়েক দিনে সোয়ে নাই একের পর এক স্বজন, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীর মৃত্যুর খবর পেতে থাকেন। তাদের বেশির ভাগই মারা গেছেন মসজিদে। নিহত ব্যক্তিদের কেউ কেউ নগরের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ইমাম সোয়ে বলেন, যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের কথা ভাবি, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশুরাও রয়েছে। তাদের কেউ কেউ খুবই ছোট ছিল। এটা নিয়ে কথা বলার সময় আমি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।

মিয়ানমারে শুক্রবারের ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সাগাইং ও মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল সাগাইং অঞ্চলে। ধ্বংসস্তূপে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জান্তা সরকার থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বৌদ্ধ-অধ্যুষিত মিয়ানমারে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। সাগাইং ও মান্দালয়ে প্রাচীনকালে তৈরি বহু বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। তবে শহর দুটিতে মুসলিমদের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো।

বিজ্ঞাপন

গত সোমবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, নামাজ আদায় করার সময় ভূমিকম্পে মসজিদ ধসে পড়ে প্রায় ৫০০ মুসল্লি মারা গেছেন।

সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ধসে পড়া মসজিদগুলো যে সড়কে ছিল, সেটির নাম মায়োমা স্ট্রিট। ভূমিকম্পে শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এটি। মায়োমা সড়কের দুই পাশের অনেক ভবনও ধসে পড়েছে।

download

ইমাম সোয়ে নাই

ইমাম সোয়ে বলেন, যারা বেঁচে গেছেন, তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, ভূমিকম্পের সময় মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।

২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইমাম সোয়ে তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান।

সোয়ে বলেন, মসজিদ প্রাঙ্গণে যেখানে অজু করা হয়, সেখানেও মৃতদেহ পাওয়া গেছে। উদ্ধারের সময় মৃতদেহগুলোর মধ্যে কেউ কেউ একে অন্যের হাত ধরেছিলেন। খুব সম্ভবত ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনির সময় তারা একজন আরেকজনের হাত ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।

সেখানে ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সোয়ের স্ত্রীর পরিবারের বেশ কয়েকজন রয়েছেন। রয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক একজন সহকারী ইমামও। স্থানীয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান এবং মায়োমা মসজিদের একমাত্র নারী ট্রাস্টিও মারা গেছেন। সোয়ে বলেন, ওই নারী ট্রাস্টি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় সময়ই মসজিদে নানা অনুষ্ঠানের জন্য নিজের পকেট থেকে অর্থ দিতেন।

সোয়ে বলেন, যখনই তিনি তার সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যুর খবর পাচ্ছেন, নতুন করে শোকের ঢেউ তার ওপর আছড়ে পড়ছে।

ইমাম সোয়ে আরও বলেন, আমার বিধ্বস্ত লাগছে, আমার বারবার এসব মনে হচ্ছে। আমি তাদের স্মৃতি মনে রাখব। যদিও তাদের কেউ আমার খুব ঘনিষ্ঠ স্বজন ছিলেন না, কিন্তু তারা সব সময় আমাকে তাদের একজন হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। আমার পেছনে নামাজ আদায় করেছেন, আমার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।

ইমাম সোয়ে বলেন, মুসলিমদের জন্য এটা খুবই দুঃখের, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের তাদের শেষ যাত্রায় নিজের হাতে দাফন করতে পারছি না। কয়েক দিন ধরে আমি ঘুমাতে পারছি না। এখনো কয়েকজন স্বজনের কোনো খোঁজ পাইনি। তাদের মধ্যে আমার আপন ভাই-বোনও রয়েছেন। তারা মান্দালয়ে বসবাস করতেন।

ইমাম সোয়ে সাগাইংয়ে উদ্ধারকাজে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। সেখানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন অন্তত এক হাজার মুসলিমের সাহায্য প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সোয়ে বলেন, সেখানে কেউ যখন সাহায্য চান তখনই কেবল আমার খানিকটা স্বস্তি লাগে এবং আমি তাদের সাহায্য করতে পারি।

সাগাইংয়ের মায়োমা সড়কে এখনো শত শত মানুষ অবস্থান করছেন। হয় তারা ভূমিকম্পে বাড়িঘর হারিয়েছেন অথবা বাড়িঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, এখনো পরাঘাতে (আফটার শক) ওই সব অঞ্চল কেঁপে কেঁপে উঠছে। সেখানে খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

আরটিভি/এমএ-টি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission