জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার ২৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন। এ হামলার আহত এক কিশোরকে এ সময় স্থানীয় এক যুবক উদ্ধার করেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে ওই কিশোরকে পিঠে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দৌড়ে নামতে দেখা যায় তাকে। কমলা রঙের জ্যাকেট পড়া সাজ্জাদকে ওই কিশোর দুই হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।
হামলার সময় কয়েকজন স্থানীয় যুবক পর্যটকদের বাচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের একজন সাজ্জাদ আহমেদ বাট। বন্দুকধারীদের হামলার সময় ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
এ বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, যাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন। আরও অনেকেই ছিলেন, যারা একই কাজ করছিলেন। ওইদিন চাচির দাফনে অংশ নিতে ঘটনাস্থলের কাছে একটি স্থানে অবস্থান করছিলেন তিনি।
ভারাক্রান্ত কণ্ঠে সাজ্জাদ বলেন, আমার কাছে ধর্মের আগে মানবিকতা, মানবতা। পহেলগাঁও পনি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ ওয়ান একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই ঘটনা জানালে আমি তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বিকেল ৩টার দিকে সেখানে পৌঁছই। আহতদের পানি খাওয়াই এবং যারা হাঁটতে পারছিলেন না তাদের কাঁধে তুলে নিয়ে আসি। তাদের অনেককে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পর্যটকদের কাঁদতে দেখে আমার চোখে জল এসে গেছে। এরাই আমাদের অন্নসংস্থানে সাহায্য করে। এই পর্যটকদের ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।
ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদ যে কিশোরকে উদ্ধার করেন, তার মুখমণ্ডল ও শরীর বেয়ে রক্ত পড়ছিল। তবে তিনি ওই কিশোরের নাম জিজ্ঞেস করেননি।
সাজ্জাদ বলেন, তার ঠিক পেছনেই ডান পাশে একটি ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে কিশোরটির মাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, আমরা যদি ভয় পেতাম, তাহলে আহতদের সাহায্য করতে পারতাম না। অবশ্যই কিছুটা ভয় ছিল, কিন্তু বিষয়টি ছিল মানবতার। সেদিন বন্দুকধারীরা সেখানে মানবতাকে হত্যা করেছিল।
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হল পর্যটন। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে হু হু করে বাড়ছিল কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা। ২০২১ সালে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ১ কোটি ৮৯ লাখ । ২০২৩ সালে তা আরও বেড়ে হয় ২ কোটি ১১ লাখ। ২০২৪ সালে ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
আরটিভি/এমএ/এআর