‘পাপ’ করলে নাকি নরকে যাওয়া ছাড়া মুক্তি নেই। পৃথিবীর নানা সংস্কৃতিতে নরক নিয়ে রয়েছে নানা মত। কারও মতে ‘নরকের দ্বার’ রয়েছে এই পৃথিবীতেই। সেখানে নাকি সব সময় আগুন জ্বলে। সত্যিই কি এমন কোনও জায়গা রয়েছে?
পশ্চিম এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তানে নাকি রয়েছে এক ‘নরকের দ্বার’। যেখানে রয়েছে এক বিশাল গর্ত আর যার মুখ থেকে সবসময়ই আগুন জ্বলে। বিষয়টা ঠিক কি? সুন্নি অধ্যুষিত এই দেশের রাজধানী আশখাবাদ। এই দেশটির প্রতিবেশি দেশ হচ্ছে ইরান, কাজাখস্তান।
আশখাবাদ থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে এই ‘নরকের দ্বার’! ধূ ধূ মরুভূমির মাঝে ২০ মিটার গভীর একটা রহস্যময় গর্ত। প্রায় ৫০ বছর একটানা আগুন জ্বলছে সেখানে।
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ এই দেশ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে থাকাকালীন ১৯৭১ সালে ভূতত্ত্ববিদরা এখানে গ্যাস নিষ্কাশনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সাফল্য আসেনি। এই খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সেখানে তৈরি হয় বিশাল এক ক্রেটার বা গর্ত। সেই গর্ত থেকে যাতে কোনোভাবে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে আসতে না পারে, সেজন্য ওই গর্তে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু সেই আগুন আর নেভেনি। স্থানীয় ভাষায় এই ক্রেটারকে বলা হয়, নরকের দ্বার বা গেট অব হেল। জন ব্র্যাডলি নামে মার্কিন আলোকচিত্রীর কারণেই এই জায়গার ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।
কেন অবিরত জ্বলছে এই ক্রেটার? বিজ্ঞানীরা এখনও এর স্বতঃসিদ্ধ ব্যাখ্যা না দিতে পারলেও বেশির ভাগের মতে, সালফার, মিথেনসহ বেশ কিছু গ্যাসের কারণেই এই আগুন। গর্তের মুখ থেকে সব সময়ই সালফারের গন্ধ নির্গত হয়।
সন্ধ্যা হতেই অনেক দূর থেকেও এই আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ে। উপগ্রহতেও ধরা পড়েছে সেই ছবি।
২০১০ সালে তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতি গুরবানগুলি বের্ডিমুহামেডো এটি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নরকের দ্বার দেখতে পর্যটকদের প্রবল উৎসাহে সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হয় সরকার। ওই এলাকার আয়ের অন্যতম উৎসই এই নরকের দ্বার।
তবে এই প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎসমুখ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফাঁকা মরুভূমির মাঝে এই ‘দারভাজা গ্যাস ক্রেটার’ নিয়ে বিস্ময়ের অন্ত নেই।
এ/পি