নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উত্তপ্ত আসামে নিহত ৫
কারফিউ, সেনা-আধাসেনার টহলদারি, প্রধানমন্ত্রীর টুইট আর্জি— সব উপেক্ষা করে গতকালও আসামের বিভিন্ন প্রান্তে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। দোকান, গাড়ি, বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগায় জনতা। গত দুদিনের বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
যদিও সরকারি সূত্রে তিনজনের মৃত্যুর কথা জানিয়ে বলা হয়, তিনসুকিয়ায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে নারায়ণ নামে এক বৃদ্ধ। বিহারের বাসিন্দা নারায়ণ হিজুগুড়ি এলাকায় বাঙালি মালিকানাধীন একটি হোটেলে কাজ করতেন। বিক্ষোভকারীরা হোটেলে আগুন লাগানোয় তার মৃত্যু হয়।
গুয়াহাটির লাচিতনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দীপাঞ্জল দাস নামে সেনা ক্যান্টিনের কর্মী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গুয়াহাটিরই হাতিগাঁও শঙ্কর পথে পুলিশের গুলিতে এক জন মারা গেছে। তার নাম জানা যায়নি। যদিও বেসরকারি সূত্রের দাবি, শঙ্কর পথে মৃতের সংখ্যা দুই। বশিষ্ঠ নতুন বাজার এলাকাতেও একজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) পাসের পরে অসমীয়াদের রোষের মুখে একদিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিরা, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা। ডিব্রুগড়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে হামলার চেষ্টা হলে পুলিশের লাঠি ও গুলিতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মুখ্যমন্ত্রীর নিজের এলাকা ছাবুয়ার বিধায়ক বিনোদ হাজরিকার বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। হামলার শিকার হন মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা শান্তনু ভরালি, বিজেপির মন্ত্রী রঞ্জিত দত্ত, বিধায়ক আঙুরলতা ডেকার বাড়িও। আসাম গণ পরিষদের গুয়াহাটির আমবাড়ি সদর দপ্তরে ভাঙচুর হয়।
মারমুখী জনতাকে ঠেকাতে পুলিশ বহু জায়গায় লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। গুয়াহাটিসহ বেশ কিছু জায়গায় গুলিও চালায় তারা। লালুংগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন আহত হয়। তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া আদাবড়ি, হেঙেরাবাড়ি, উজানবাজার, গুয়াহাটি ক্লাব, চাঁদমারি, গণেশগুড়ি, চচলসহ বিভিন্ন স্থানে। চাঁদমারিতে রেললাইনে আগুন জ্বালানো হয়। পাথর ছোঁড়া হয় ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্তের গাড়ি লক্ষ্য করে। ডিব্রুগড়ের চাবুয়ায় সার্কেল অফিস, পোস্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, জেলা পরিষদ কার্যালয় পোড়ানো হয়। জোরহাটে গ্রেপ্তার হন কৃষকমুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ।
---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: টানা তিনবার জয়ী হলেন টিউলিপ সিদ্দিক
---------------------------------------------------------------
এদিকে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমারকে সরিয়ে মুন্নাপ্রসাদ গুপ্তকে নতুন কমিশনার করা হয়েছে। এডিজিপি (আইনশৃঙ্খলা)-র দায়িত্ব থেকে মুকেশ আগরওয়ালকে সরিয়ে তার জায়গায় এনআইএ-র আইজি জি পি সিংহকে আনা হয়েছে। এরপরও অবশ্য রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তপ্তই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর হাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
অন্যদিকে রাজ্যবাসীর উদ্বেগ দূর করতে অসমীয়া ভাষায় টুইট করে আসাম চুক্তির ষষ্ঠ ধারার রূপায়ণ ও অসমীয়াদের স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হিংস্র আন্দোলন ঠিক নয়। নেতাদের একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।
তবে কোনও আবেদনেই কান দেয়নি মারমুখী জনতা। কারফিউ, ব্যারিকেড উড়িয়ে, লাঠি-কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট অগ্রাহ্য করে লতাশিলের মাঠে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)-র ডাকা সভায় হাজির হয় অসংখ্য মানুষ। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, আমরা বাঙালি বা মুসলিম বিরোধী নই। শুধু অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে এই লড়াই।
এ
মন্তব্য করুন