চীন সরকার মঙ্গলবার জানিয়েছে, জাপানি কোম্পানি ফুজিফিল্ম হোল্ডিংস গ্রুপের তৈরি করা একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ওষুধ নতুন করোনভাইরাস বিরুদ্ধে কার্যকর। বেইজিং ইতোমধ্যে ফুজিফিল্ম তোয়ামা কেমিক্যালের তৈরি ফাভিপিরাভির নামের ওই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে এবং অ্যাভিগান নাম দিয়ে বিক্রি করছে। খবর নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের।
চীনের বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় বায়োটেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক কেন্দ্রের পরিচালক ঝাং জিনমিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এটা খুব নিরাপদ এবং স্পষ্টভাবে কার্যকর।
ফুজিফিল্ম তোয়ামা ২০১৪ সালে ওষুধটি তৈরি করেছিলেন। জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সেখানকার রোগীদের দেয়া হচ্ছে।
উহান এবং শেনজেনের হাসপাতালে ২০০ রোগীদের ওপর এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের ওই ওষুধ দেয়া হয়েছিল তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত ভাইরাসমুক্ত হয়েছে; আর নিউমোনিয়া লক্ষণগুলোও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল।
ঝাং বলেন, ফাভিপিরাভির নেয়া রোগীরা চারদিনে ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন যেখানে কন্ট্রোল গ্রুপের রোগী ভাইরাসমুক্ত হন ১১ দিনে। ওই ওষুধের সুস্পষ্ট কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল না বলেও জানান তিনি।
উহানে আরেকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে জানা গেছে যে ফাভিপিরাভির নেয়া রোগীরা গড়ে ২.৫ দিনে জ্বর থেকে সেরে উঠেছে; অন্যরা ৪.২ দিনে সুস্থ হয়েছে। ওষুধ নেয়ার ফলে ৪.৬ দিনে কাশির লক্ষণ কমে এসেছে, যা অন্য রোগীদের তুলনায় ১.৪ দিন কম।
ফাভিপিরাভির ওষুধ গ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৮.২ শতাংশ রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য যন্ত্রের সহায়তা নিতে হয়েছে, অন্যদিকে কন্ট্রোল গ্রুপের রোগীদের ১৭.১ শতাংশের ক্ষেত্রে ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়েছে।
চীন অ্যাভিগান ওষুধের ব্যাপারে ইতিবাচক রিভিউ দিলেও জাপানে তা পুরোপুরি বিপরীত। এই শর্তে ২০১৪ সালে ওষুধটির অনুমোদন দেয়া হয় যে, যদি সরকার নতুন বা পুনরায় ছড়িয়ে পড়া কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তবেই এটি ব্যবহার করা হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ওষুধ ব্যবহারে মৃত্যু বা বিকলাঙ্গতা ঘটতে পারে এবং বীর্যতে স্থানান্তরিত হতে পারে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য পর্যাপ্ত ক্লিনিকাল ডেটা নেই বলে রায় দেওয়ার পরে দক্ষিণ কোরিয়ার খাদ্য ও ওষুধ সুরক্ষা মন্ত্রকও আভিগান আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশটির যোনহাপ সংবাদ সংস্থা এই সপ্তাহে জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সেফটি মন্ত্রণালয়ও নিরাপত্তার কারণে অ্যাভিগান আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি সপ্তাহে দেশটির ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থার এক খবরে বলা হয় যে, ওই ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ক্লিনিক্যাল উপাত্ত নেই তাই এটি বিপক্ষে মত দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে যদিও ফুজিফিল্মের শেয়ারের দাম বাড়ছে তবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ফাভিপিরাভির ব্যাপক উত্পাদন শুরু করলে কীভাবে তারা লাভবান হবে তা স্পষ্ট নয়। ফুজিফিল্মের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা চীনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং এই মুহূর্তে সেগুলো মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ফাভিপিরাভিরের পেটেন্ট লাইসেন্স নিয়ে ২০১৬ সালে চীনের ঝেজিয়াং হিসুন ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে চুক্তি করে ফুজিফিল্ম। তবে ওই মুখপাত্র বলেছেন যে, চুক্তিটি গত বছর বাতিল করা হয়েছিল; যদিও দুইপক্ষের মধ্যে এখনও ‘সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক’ রয়েছে।
চীনা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে, তারা ফেব্রুয়ারিতে ওষুধ উত্পাদন করার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে এবং এটির একটি জেনেরিক ভার্সন তৈরি বৃদ্ধি করতে পারে।
ওই মুখপাত্র বলছেন, ফুজিফিল্মের ফাভিপিরাভির পেটেন্টস জাপানে বৈধ, তবে চীনে সাবসটেন্স পেটেন্টের মেয়াদ গত বছর শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে ঝেজিয়াং হিসুনের জন্য এই ওষুধের জেনেরিক ভার্সন তৈরির পথ সুগম হয়।
ক্লিনিক্যাল গবেষণার জন্য জাপানি হাসপাতালগুলোতে অ্যাভিগান সরবরাহ করছে ফুজিফিল্ম এবং জাপানে নিজস্ব ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। জাপানে মার্চ মাসে এটির গবেষণা শুরু হয়েছে, তবে ফলাফল পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে নিচি-ইকো ফার্মাসিউটিক্যালের নাফামোস্টাট ওষুধ মানুষের কোষে করোনাভাইরাস প্রবেশে বাধা দিয়ে কার্যকর সংক্রমণকে বাধাগ্রস্ত করে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এমন ঘোষণা দেয়ার পর বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ