নর্থ মেসিডোনিয়ার কোচানি শহরের একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও ৮ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৫২ জন।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে আটক করেছে সেখানকার পুলিশ। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের।
রোববার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সময় ভোররাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ‘পালস ক্লাব’ নামের ওই নাইটক্লাবটিতে আগুন লাগে। এ সময় সেখানে প্রায় ৫০০ মানুষ দেশটির জনপ্রিয় হিপ-হপ ব্যান্ড ডিএনকে’র কনসার্ট উপভোগ করছিলেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগুন লাগার পর ভবনে প্রচণ্ড ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে এবং বের হওয়ার পথ সংকীর্ণ থাকার কারণে অনেকেই বের হতে পারেননি। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বুলগেরিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া এবং তুরস্কে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোর্দানা সিলিয়ানভস্কা-দাভকোভা।
বিবৃতি দিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পানচে তস্কোভস্কি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কনসার্ট চলাকালে পটকা জাতীয় আতশবাজির আগুন ছাদে লাগে, যা দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি ছিল। এরপর মুহূর্তেই আগুন পুরো ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যান্ডের পারফরম্যান্স চলাকালে দুটি আতশবাজি জ্বলে ওঠে এবং আগুন দ্রুত ছাদে ছড়িয়ে পড়ে। তখনো অনেক দর্শক ক্লাবে ছিলেন এবং কেউ কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
নর্থ মেসিডোনিয়ার সরকারি কৌঁসুলির দপ্তরের মুখপাত্র বিলজানা আরসোভস্কা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তারাও রয়েছেন, যারা নাইটক্লাবটির অনুমোদন দিয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তস্কোভস্কি জানান, ক্লাবটির কার্যক্রম চালানোর কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল না। ক্লাব পরিচালনার পেছনে ঘুস ও দুর্নীতির কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা এখন তদন্ত করছে পুলিশ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মূলত একটি পুরোনো কার্পেট গুদামঘরকে রূপান্তরিত করে নাইটক্লাব হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেখানে জরুরি পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। কৌঁসুলি আরসোভস্কা জানিয়েছেন, ক্লাবটিতে বের হওয়ার জন্য মাত্র একটি কার্যকরী পথ ছিল। কারণ, পেছনের দরজা ছিল তালাবদ্ধ।
এদিকে এ ঘটনায় সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে নর্থ মেসিডোনিয়ার সরকার। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হ্রিস্তিজান মিকোস্কি।
প্রেসিডেন্ট গোর্দানা সিলিয়ানভস্কা-দাভকোভা বলেছেন, কোনো ব্যবসা বা কার্যক্রম মানদণ্ড ও নিয়মকানুনের বাইরে পরিচালিত হতে পারে না। নিরীহ মানুষের জীবন যেন আর ঝুঁকিতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরটিভি/এসএইচএম/এস