জার্মানির ওল্ডেনবুর্গে ২০ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মারা গেছেন। ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং কাঠামোগত বর্ণবাদের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত সপ্তাহান্তে পুলিশের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির প্রাণহানির প্রতিবাদে শুক্রবার জার্মানির লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের ওল্ডেনবুর্গ এবং অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
২০ এপ্রিল একটি নাইটক্লাবের বাইরে ঝগড়ার পর একজন পুলিশ অফিসার গুলি চালালে লরেঞ্জ এ. নামে ২১ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক আহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০ এপ্রিল ভোরে ওল্ডেনবুর্গ নাইটক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীরা লরেঞ্জকে সেখানে প্রবেশে বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২১ বছর বয়সী ওই যুবক তাদের দিকে মরিচের স্প্রে ছুঁড়তে শুরু করেন। এর ফলে নিরাপত্তাকর্মীরা সামান্য আহত হন। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে পালটা তাড়া করলে ছুরি দেখিয়ে তিনিও পালিয়ে যান। এরপর পুলিশের একটি টহল গাড়ি তাকে তাড়া করে।
পুলিশের বক্তব্য, এরপর লরেঞ্জ তাদের (পুলিশ কর্মীদের) ভয় দেখানোর জন্য এগিয়ে যান এবং মরিচের গুড়া নিক্ষেপ করেন। এরপরই ২৭ বছর বয়সি এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করেন। লরেঞ্জকে এরপর হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে তিনি মারা যান। তার শরীরে তিনটি গুলির ক্ষত পাওয়া গেছে। একটি তার মাথার পেছনে, একটি শরীরের উপরের অংশে এবং তৃতীয়টি তার নিতম্বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তিনটি গুলিই তার শরীরের পেছনে লেগেছে। চতুর্থ আরেকটি গুলি তার নিতম্বে ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করেছেন, তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার ওল্ডেনবুর্গে প্রায় আট থেকে ১০ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে এই ঘটনার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানান। বিক্ষোভে বিভিন্ন বয়সের এবং জাতির মানুষ অংশগ্রহণ করেন। লরেঞ্জের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দেন অনেকে। রাজধানী বার্লিনসহ জার্মানির অন্যান্য শহরেও ছোট ছোট বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওল্ডেনবুর্গের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী অনেকেই মনে করেন, গুলি চালানোর পেছনে বর্ণবাদী উদ্দেশ্য ছিল।
জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে ওল্ডেনবুর্গ-ভিত্তিক জাস্টিস ফর লরেঞ্জের মুখপাত্র সুরজ মাইলিতাফি বলেছেন, পেছন থেকে বেশ কিছু গুলি চালানোকে ন্যায্যতা দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, কোনও ব্যক্তিরই পুলিশি সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা নয়। পুলিশের উচিত পরিস্থিতির উত্তেজনা কমানো। যে প্রতিষ্ঠানের আমাদের রক্ষা করার কথা, তার উপর আস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পুলিশের ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্নে শ্মিড্ট বলেছেন, লরেঞ্জের মৃত্যু, পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ অনেক মানুষকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। জার্মানিতে পুলিশের প্রাণঘাতী গুলি চালানোর ঘটনা তুলনামূলক ভাবে বিরল। এই ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠী সমালোচনা করেছে। জার্মানি পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত বর্ণবাদ মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
আরটিভি/এএইচ