প্রচলিত পদ্ধতিতে সেতু তৈরিতে অনেক সময় লাগে। জার্মানির এক কোম্পানি দ্রুত-নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ করছে। ফলে কম সময়ে সেতু তৈরির কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে৷ভবিষ্যতে আরও সেতু সংস্কার ও নির্মাণে এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে চায় জার্মানির পরিবহণ মন্ত্রণালয়। জার্মান কোম্পানি এশটারহফ বাউ সম্প্রতি ম্যুনস্টার শহরে একটি ছোট সেতু তৈরি করেছে।
কোম্পানির প্রকৌশলী উডো ভেসেল বলেন, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে আমরা দেড় বছরের পরিবর্তে মাত্র সাত সপ্তাহে সেতুটি তৈরি করেছি। এত দ্রুত একটি সেতু তৈরি করা কঠিন কাজ ছিল। আমার মনে হয় এটা জার্মানিতে প্রথম। কোম্পানিটি বলছে, এই পদ্ধতিতে নির্মাণ সময় গড়ে ৭৫ শতাংশ কমানো যেতে পারে। ম্যুনস্টারে ৯০ শতাংশ সময় কম লেগেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়া সংশ্লিষ্ট রাজ্য কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। একটি উদ্ভাবনী মডুলার নির্মাণ পদ্ধতি এটি সম্ভব করেছে।
এশটারহফ বাউ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টেও রেডেমান বলছেন, এটা ৮৫ শতাংশ প্রি-ফেব্রিকেটেড। প্রিকাস্ট প্ল্যান্টে আমরা কংক্রিটের পুরো নির্মাণকাজটা আগেই করে রাখি। সেখানে আমরা আবহাওয়ার কোনো বাধা ছাড়াই নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারি। শীতে তাপমাত্রা অনেক কমে গেলে, কিংবা বাইরে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলেও, কিছু যায় আসে না -- আমরা সুরক্ষিত পরিবেশে কাজ করি। তাই আমাদের ডাউনটাইম খুব কম থাকে। অনেক প্রিকাস্ট উপাদান ক্রেনের সাহায্যে সরবরাহ এবং ইনস্টল করা হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষভাবে একটি বিশেষ কংক্রিট পেটেন্ট করা হয়েছে।
নির্মাণকাজের নতুন পদ্ধতির কারণে একটি সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে অল্প সময়ের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখতে হয়৷ ফলে যানবাহন চলাচল খুব বেশি ব্যাহত হয় না। প্রচলিত পদ্ধতিতে সেতু নির্মাণে বছরের পর বছর সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে নির্মাণস্থলেই কংক্রিট ঢালা হয়। ফলে অনেক কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এছাড়া ঐ সময় যে যানজট হয়, তা বায়ুদূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। রাস্তার কাজের সময় যানজটের কারণে পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ে, তা নির্ধারণ করতে কম্পিউটার মডেল তৈরি করা হয়েছে।
জার্মানির আখেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ডির্ক কেম্পার বলেন, আপনি রাস্তায় যে কাজের পরিকল্পনা করছেন, আর সেই সময় কোন লেনগুলি খোলা থাকবে, তা সিস্টেমে ঢোকাতে পারেন। সিস্টেম তখন যানজটের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে। আখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা কয়টি যানবাহন প্রতি ঘণ্টায় কত কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে তা জানার চেষ্টা হয়েছে। সর্বোচ্চ হিসেব ধরলে, প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতির কারণে ৮১ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। আর দ্রুত-নির্মাণ পদ্ধতিতে নির্গত হয় মাত্র ২৮ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড। অর্থাৎ, পরিবেশের উপর প্রভাব ৬৫ শতাংশ কম পড়ে।
জার্মানির অর্ধেকেরও বেশি সেতু ১৯৮৫ সালের আগে নির্মিত। ঐ সময়ের তুলনায় এখন লোড ক্যাপাসিটি আর দৈনিক যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতি ছয় বছরে একবার সেতুগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়। জার্মানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ সেতুকে সন্তোষজনক গ্রেড দেওয়া হয়েছে। ত্রুটিগুলি প্রায়ই লুকানো হয়ে থাকে। স্প্যানের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে একটি সেতু নির্মাণে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ২০২৩ সালে জার্মানির রাস্তায় আনুমানিক চার লাখ ২৭ হাজার ঘণ্টা যানজট ছিল। তাই দ্রুত নির্মাণ পদ্ধতির কিছু স্পষ্ট সুবিধা আছে। তাহলে আপনাকে শুধু অল্প সময়ের জন্য যানজটে পড়তে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রস্তুতি। তারপর নির্মাণস্থলে গিয়ে অল্প সময় কাজ করলেই হয়। সেতুর কাজ শেষ করে চলে যাওয়া, বলেন এশটারহফ বাউ এর রেডেমান।
এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি সেতু নির্মাণে দ্রুত-নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু সেতুর নির্মাণকাজ রেকর্ড সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে নতুন পদ্ধতিতে কাজের পরিমাণ বাড়াতে চাইছে। কম যানজট, কম দূষণ, দ্রুত সমাপ্তি। দ্রুত-নির্মাণ পদ্ধতিতে সেতু তৈরি জরাজীর্ণ সেতুগুলির সংস্কার এবং প্রতিস্থাপনের কাজকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে।
আরটিভি/এএইচ