গত দু’দিন ধরে জম্মু, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতে তুরস্কের ড্রোন দিয়ে মুহুর্মুহু হামলা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভারত। এই বিশেষ ড্রোন ব্যবহার করে তুরস্কের সেনাও। স্বল্প উচ্চায় ঘাপটি মেরে ওড়ার ক্ষেত্রে এই ড্রোন বিশেষভাবে সক্ষম। এটি মূলত কোয়াডকপ্টার ড্রোন। অর্থাৎ যার ৪টি রাউটার থাকে। ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে করে এই ড্রোন নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।
ভারতীয় সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হয় সোনগার। এই সোনগার সাপ্লাই করে অ্যাসিসগার্ড। তাই এর পুরো নাম অ্যাসিসগার্ড সোনগার। ড্রোনটি কমব্যাট বা ফাইটার ড্রোন হিসাবেও কার্যকরী। স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়েল, দুই মোডেই এই ড্রোনকে চালানো সম্ভব। এই ড্রোন সারাক্ষণ টেলিমেট্রি ডেটা ও ছবি ট্রান্সমিট করতে পারে। অর্থাৎ গোয়েন্দাগিরিতে ভালই পারদর্শী।
পাকিস্তানের লাগাতার ড্রোন হামলা নিয়ে শনিবার (১০ মে) ভারতীয় সেনা ও বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, যে ড্রোনগুলি দিয়ে পাকিস্তান লাগাতার হামলার চেষ্টা করছে, সেগুলি তুরস্কের তৈরি সোনগার ড্রোন। তুরস্কের সংস্থা অ্যাসিসগার্ড এই ড্রোনের নির্মাণকারী সংস্থা। এই ড্রোনগুলিকেই ‘সোয়ার্ম ড্রোন’ হিসাবে হামলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের তৈরি সোনগার ড্রোন ব্যবহার করে এক ঝাঁকে অনেক ড্রোন বিভিন্ন নিশানায় পাঠিয়ে হামলা করা হয়। এই ড্রোন ২০১৯ সালে তুরস্কের সেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইস্তানবুলে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ফেয়ারে প্রথম এই অ্য়াসিসগার্ড সোনগার প্রকাশ্যে আসে। পরে ২০২০ সালে এর সফল পরীক্ষার পর পাকাপাকিভাবে সামরিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোনগার ড্রোনের আকার ১৪০ সেন্টিমিটার, ওজন ৪৫ কেজি। বিস্ফোরক ছাড়া এই ড্রোন ৩৫ মিনিট টানা উড়তে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এই ড্রোন সামরিক অস্ত্র হিসাবে বেশ সফল। স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান, ছোট আকারের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৮১ মিলিমিটারের মর্টার বহনক্ষম এই ড্রোন মূলত ছোট ছোট হামলার কাজে ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে এই ড্রোন।
এ ছাড়া, অভিযানের সময় যোগাযোগ স্থাপনে এই ড্রোন জিপিএস এবং গ্লোনাস নেভিগেশনকে কাজে লাগায়। স্বচালিত এবং দূরনিয়ন্ত্রিত দু’টি প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে এই ড্রোনে। এই ড্রোনের আবার রকমফের আছে। সেগুলি হল, সোনগার ৫.৫৬x৪৫ মিমি অ্যাসল্ট রাইফেল, সোনগার ২x৪০ মিমি গ্রেনেড লঞ্চার, সোনগার ৩x৮১ মিমি মর্টার গ্রিপার, সোনগার ৬x৪০ মিমি ড্রাম টাইপ গ্রেনেড লঞ্চার। তুর্কি এই ড্রোনের বিশেষত্ব হল, সামরিক অস্ত্র ও অন্য ড্রোনকে সহজেই ধ্বংস করতে পারে। হঠাৎ আক্রমণ বা হামলার ক্ষেত্রে এই ড্রোন অত্যন্ত কার্যকরী।
জম্মু, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতে পাকিস্তানি হামলার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিকস অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কোরের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানান, ভারতের উপর হামলা চালাতে তুরস্কের ড্রোন ব্যবহার করছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান থেকে আসা ৪০০ ড্রোন ধ্বংস করে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ ফরেনসিক পরীক্ষা করার পর নিশ্চিত করা হয়েছে এগুলি ছিল তুরস্কের অ্যাসিসগার্ডের সোনগার ড্রোন। এই ড্রোনে ৪০০টির বেশী হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান যা ভূপতিত করেছে ভারতের এয়ার ডিফেন্স।
আরটিভি/কেএইচ