ঢাকারোববার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেমন আছে সাংবাদিক রোজিনার কন্যা শিশুটি? 

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৯ মে ২০২১ , ০৭:২৫ পিএম


loading/img
রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ রাজধানীর সার্ক ফোয়ারার সামনে মানবন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ৮ বছর বয়সী কন্যা শিশু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তার মাকে কাছে না পেয়ে কান্নাকাটি করার পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। মা রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুরে মহিলা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তা এখনও ছোট্ট মেয়েটি জানে না। শিশুটি যেনো কোনোভাবেই মায়ের এমন কঠিন পরিস্থিতির বিষয়টি টের না পায়, সে কারণে তাকে টেলিভিশন ও ইন্টারনেট থেকে সার্বক্ষণিক দূরে রাখতে হচ্ছে পরিবারকে।

বিজ্ঞাপন

কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন করে আলোচনায় আসেন এই নারী সাংবাদিক।

এদিকে এ ঘটনায় আজও সারাদেশে কঠোর প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে। দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য এবং করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে সরকারি টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে একাধিক আমলাসহ সংশ্লিষ্টরা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে এই গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছে সাংবাদিক মহল।

বিজ্ঞাপন

রোজিনা ইসলামের শিশুকন্যাকে জানানো হয়েছে, তার মা অফিসিয়াল কাজে ঢাকার বাইরে রয়েছেন। অথচ, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে গিয়েই এখন প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি আইনে গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

রোজিনার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছেন রোজিনার ইসলামের কন্যা শিশুটি। রোজিনাও তার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন আরটিভি নিউজকে বলেন, বাচ্চাটা মায়ের জন্য কান্নাকাটি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঠিকমতো খাবার দাবার খাচ্ছে না। মাকে কাছে পেতে চাচ্ছে। অন্য সময়ে তার মা বাসার বাইরে থাকলে ক্ষণে ক্ষণে মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতো। কিন্তু, এখনতো আর সেটা পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চা মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। যদিও তার মন ভালো রাখার জন্য ওর অন্যান্য কাজিনদের বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আনন্দঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। মাঝে মাঝে কাজিনদের সাথে খেলাধুলা করছে, তাকে কিছুক্ষণ পর পর মায়ের খোঁজও করছে। গত রাতেও মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলো বাচ্চাটা, কিন্তু তা কি করে সম্ভব!

মনিরুল ইসলাম মিঠু আরও বলেন, আদালতে গত জামিন শুনানির দিন অনুমতি নিয়ে মাত্র ১ মিনিটের জন্য মায়ের সঙ্গে কথা বলা সুযোগ পেয়েছে মেয়েটা। ওই সময়ে আমিও কথা বলেছি।

রোজিনার বড় ভাই মো. সেলিম বলেন, ‘একমাত্র মেয়েটি রোজিনাকে ছাড়া কোনোভাবেই থাকতে পারে না। মেয়েকে রোজিনার কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি বলা হয়নি। সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সারাদিন পরিবারের সবাইকে মেয়েটি একই কথা বলতে থাকে, আম্মু কোথায়, আম্মু কবে আসবে? আমরা কোনোমতে তাকে বুঝ দিয়ে রেখেছি। পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার পর একবার মেয়ের সঙ্গে কথা বলানো হয় রোজিনাকে। এ পাশ থেকে মেয়ে জানতে চাইল, আম্মু তুমি কোথায়, কবে আসবে? রোজিনা ইসলাম বলেন, আম্মু, তুমি চিন্তা করো না। আমি একটু কাজে ঢাকার বাইরে এসেছি। অফিসের কাজে এসেছি। কাজ শেষ করেই চলে আসবো।’

রোজিনার ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের কাছেই আছে। শুধু মায়ের কথা বলে। আমরা তাকে রোজিনার কারাগারে যাওয়ার কথা বলিনি। তাকে কোনোমতে বুঝিয়ে রাখা হচ্ছে।’

সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ফাইল চুরির অভিযোগ তুলে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় 'অফিসিয়াল সিক্রেটস' আইনে মামলা দায়ের করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী মামলাটি দায়ের করেন। রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার সিএমএম আদালতে তোলা হয় এই সাংবাদিককে। শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। বৃহস্পতিবার ২০ মে তার জামিন শুনানি হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে বিষয়টির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ 

রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘রোজিনা একজন সৎ সাংবাদিক। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করার জন্য এর আগেও তাকে একাধিকবার নাজেহাল হতে হয়েছিল। এটিও তেমন কোনো ঘটনা হতে পারে।’ 

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রোজিনা ইসলাম কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কারসহ (২০১৪) বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।

রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার ও হেনস্থার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা গত সোমবার রাতে, মঙ্গলবার এবং আজ বুধবার সচিবালয়, প্রেসক্লাব, ডিআরইউ, কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারাসহ সারাদেশে মানববন্ধনে ও বিক্ষোভ করেন। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরাও ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। একই ঘটনায় একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

কেএফ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |