সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা কেন শাঁখা পরেন? ইতিহাস যা বলে
শাঁখা, পলা হিন্দু বিবাহিত নারীদের অপরিহার্য ভূষণ বা অলঙ্কার বিশেষ। শঙ্খ কেটে তৈরি চুড়ি বা বালা জাতীয় অলঙ্কার তৈরিকে শাখা বলে। ধর্মীয় রীতি এবং মাঙ্গলিক চিহ্ন হিসাবে বিবাহিত মহিলারা অন্যান্য অলঙ্কার, বালা, চুড়ির সঙ্গে শাঁখা, পলা পরেন। স্বামীর মৃত্যুর পর এই শাঁখা ভেঙ্গে ফেলা হয়।
শঙ্খ শিল্প ভারতের অত্যন্ত প্রাচীন লোকশিল্প। ধর্মীয় রীতি মেনে মাঙ্গলিক চিহ্ন হিসাবে অনেকেই অলঙ্কার হিসেবে যুগ যুগ ধরে শাঁখার ব্যবহার করছেন। প্রায় ২,০০০ বছর আগে দক্ষিণ ভারতে শঙ্খ-শিল্পের উৎপত্তি। পরে রাজা বল্লাল সেনের হাত ধরে দক্ষিণ ভারত থেকে বাংলাদেশে শাঁখা শিল্পের সূচনা হয়।
শাঁখা ব্যবহারের ইতিহাস ও প্রচলিত বিশ্বাস:
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী, এক অত্যাচারী অসুরের উপদ্রবে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ওই অসুরের নাম ছিল শঙ্খাসুর। এ দিকে শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন নারায়ণের একনিষ্ঠ ভক্ত। কিন্তু শঙ্খাসুরের অত্যাচারের শাস্তি দিতে নারায়ণ তাকে বধ করেন। শঙ্খাসুরের ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী দেবী তখন নারায়ণের কাছে নিজের ও স্বামীর অমরত্বের প্রার্থনা করেন। নারায়ণ তুলসী দেবীর প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে তার (তুলসী দেবী) ও শঙ্খাসুরের দেহাংশ (হাড়) থেকে শাঁখার সৃষ্টি করেন এবং বিবাহিত সম্পর্কের মাঙ্গলিক চিহ্ন হিসাবে এটির ব্যবহারের নির্দেশ দেন। মনে করা হয়, সেই থেকেই হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে বিবাহিত সম্পর্কের মাঙ্গলিক চিহ্ন হিসাবে শাঁখার প্রচলন হয়।
আরও পড়ুন:
জিন গবেষণায় রসায়নে নোবেল পেলেন ২ নারী
শান্তিতে ঘুমাতে পাঁচটি কাজ করুন
এক কাপ কফি দিয়ে রুক্ষ চুল করুন ঝলমলে
এ তো গেল পুরাণের বর্ণনা। ব্রিটিশ লেখক জেমস ওয়াইজের লেখা থেকে জানা যায়, বল্লাল সেনের সঙ্গে দক্ষিণ ভারত থেকে বাংলাদেশে শাঁখারিরা এসেছিলেন। অর্থাৎ, আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগেও শাঁখার প্রচলন ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, বল্লাল সেনের অনেক আগে থেকে (প্রায় ২,০০০ বছর আগে দক্ষিণ ভারতে শঙ্খশিল্পের উদ্ভব ঘটে) দক্ষিণ ভারতে অলঙ্কার হিসাবে শাঁখার প্রচলন ছিল। তবে তার পেছনে কোনও ধর্মীয় কারণ ছিল কিনা— সে বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
সূত্র- জিনিউজ
জিএ
মন্তব্য করুন