মন ভালো রাখে যে যোগাসনগুলো
প্রতিদিনের ব্যস্ততম জীবনের মধ্যে এখন শরীরচর্চার জন্য নূন্যতম সময় অতিবাহিত করতে নারাজ মানুষ। তবে জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করার থেকে আপনি যদি বাড়িতে বসে প্রতিদিন ১০ মিনিট যোগ ব্যায়াম করেন, তাহলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি আপনি মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাবেন।
ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, জ্বর, সর্দি-কাশির মত শরীরের অন্যান্য রোগের সঙ্গে মানসিক রোগের কোনও পার্থক্য নেই। সাধারণভাবে অনেকেই ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটির মত সমস্যাকে রোগ হিসাবে গণ্য করে না। কিন্তু এগুলোও এক প্রকার, যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক হয়ে যায়। সেই চিকিৎসা পদ্ধতিরই অন্তর্গত হলো যোগব্যায়াম। কিন্তু মানসিক রোগ হলে তবেই যোগব্যায়াম করব এমনটা নয়। বরং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে এবং মন ভালো রাখতে নিয়মিত যোগব্যায়াম করবেন।
প্রশিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে আপনার মনে জমে থাকা দুঃখ, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং আপনার মনে ইতিবাচক অনুভূতিগুলো জেগে ওঠে। আপনি হয়ে ওঠেন আরও বেশি ধৈর্যশীল। প্রত্যেকদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট যোগ ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে যাবে অনেকটাই।
জেনে নিন নিয়মিত যোগব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কতটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে—
মেজাজ ভালো রাখে: নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে শরীর ও মনে একটা সতেজতা দেখা দেয়। এতে প্রভাব উজ্জ্বলভাবে ফুটে ওঠে আপনার প্রতিটি ব্যবহারে, যার ফলে খুব সহজেই আপনার মেজাজ থাকে ফুরফুরে।।
মানসিক চাপ ও বিষন্নতা কমায়: এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তিভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তার সঙ্গে দূর হয়ে যায় ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটির মত সমস্যাও। তাই অ্যানজাইটি ও ডিপ্রেশন এবং কাজের দ্বারা তৈরি হওয়া মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত যোগাসন করুন। মনের কষ্ট বা বিষন্নতা দূর করার অসাধারণ উপায় হলো যোগাসন।
উত্তেজনা কমায় এবং আত্মসংযমবোধ বৃদ্ধি করে: নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঠিক নিয়ন্ত্রণের ফলে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা কমে আসে, যার ফলে মনও ভালো থাকে। এখান থেকেই অনেকটা কমে যায় অ্যানজাইটি ও ডিপ্রেশনের মত মানসিক রোগের ঝুঁকি। অন্যদিকে, নিজের মধ্যে তৈরি করে আত্মসংযমবোধ। এই বিষয়টি জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে, যে কোনও কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সেটি আপনি যোগাসনের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে পারবেন নিজের মধ্যে।
মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: পড়াশোনায় বা কোনও কাজে মন লাগছে না? যোগাসন করা শুরু করুন। কয়েক সপ্তাহ যোগব্যায়াম করার পর আপনি নিজেই পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবেন। নিয়মিত যোগাসন করলে মনোসংযোগ তো বেড়ে যায়ই, যেখান থেকে স্মৃতিশক্তি ও মনে রাখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী: মনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর হয়ে যায় যোগাসন করার পড়ে। প্রতিদিন যোগাসন করলে স্নায়ুগুলোও সজাগ হয় এবং সহজেই শক্তিপ্রদানকারী হরমোন উৎপন্ন করে। এই হরমোনের ফলে নেতিবাচক মনোভাব, বিষণ্নতা দূর হয়ে যায় এবং আপনার জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিশক্তি তৈরি হয়।
মানসিক চাপ কমাতে করবেন যে যোগব্যায়াযগুলো—
সুখাসন: এই আসনটি করার জন্য প্রথমে দুই পা সোজা করে বসতে হবে। এরপর ডান পা ভাঁজ করে বাম উরুর পেছনে টেনে ধরতে হবে। এরপর হাতের তালু আপনার হাঁটুতে রাখতে হবে। কয়েক সেকেন্ড বসুন শিরদাঁড়া সোজা করে।
দন্ডাসন: পা সামনের দিকে প্রসারিত করে সোজা হয়ে বসুন। এরপর দুটি গোড়ালি একসাথে টেনে ধরুন। এতে আপনার উরু, কালভস, পেলভিক পেশীগুলি শক্ত হয়। মেরুদন্ড সোজা করে রাখার জন্য নিতম্বের পাশে রাখুন আপনার তালু গুলিকে।
নৌকাসন: এই আসনটি করার সময় প্রথমে পেছনে হেলে শুয়ে পড়ুন। এরপর মাটি থেকে ৪৫ ডিগ্রি উপরে তুলে ধরুন আপনার শরীরকে। এবার পায়ের আঙুল এবং হাতের বাহু মাটির সমান্তরালে রাখুন। এইভাবে নিজেকে ধরে রাখুন কয়েক সেকেন্ড।
সান্তলানাসন: এই আসনটি করার জন্য প্রথমে উপুড় করে শুয়ে থাকতে হবে আপনাকে। এরপর হাতের তালু কাঁধের নিচে রেখে নিশ্চিত করতে হবে আপনার মেরুদন্ড এবং হাঁটু একই সারিবদ্ধ ভাবে আছে। আপনার বাহু সোজা করে রাখতে হবে এবং কব্জি রাখতে হবে কাঁধের নিচে।
মন্তব্য করুন