সেদ্ধ ব্রকলিতে কমবে ভুড়ি, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ব্রকলি হলো একটি সবুজ সবজি যা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটা খাবার। এটি ব্রাসিকা পরিবারের অন্তর্গত। ফুলকপি, বাঁধাকপি এরা সবাই একই শ্রেণীর। ব্রকলিকে কাঁচা, রান্না বা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। শীতকালে এই সবজি খেলে ওজন নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে না। ওজন কমাতে সাহায্য করে ব্রকলি। ব্রকলি হলো সুপারফুড। ব্রকলির মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে রয়েছে। এ ছাড়াও এই সবজির মধ্যে ডায়েটরি ফাইবার ও প্রোটিন পাওয়া যায়। ক্যালোরি থাকে নামমাত্র।
একটি ৮০ গ্রাম (সেদ্ধ) ব্রকলিতে ২২ কিলো ক্যালোরি, ২.৬ গ্রাম প্রোটিন, ০.৪ গ্রাম চর্বি, ২.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.২ গ্রাম ফাইবার, ৪৭৮ এমসিজি ক্যারোটিন, ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
নিউট্রিশন রিসার্চের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত ব্রকলি খেলে শরীরের মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকায় ব্রকলির মতো ব্রাসিকা শ্রেণীর সবজি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পুষ্টিকর এই সবজির গুণাগুণ জেনে নিন—
ইমিউনিটি বাড়ায়: ব্রকলিতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন কে হাড়ের যত্ন নেয়। ফোলেট কোষ গঠনে ও কোষের ক্ষয় মেরামতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এমনকী ব্রকলি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। স্তনে ক্যান্সারের কোষ গঠনের ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এই সুপারফুড হজমে সহায়তা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে: ওয়েট লসের জার্নিতে ব্রকলি রাখুন। এক কাপ সেদ্ধ ব্রকলিতে ৫৫ ক্যালোরি ও ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। ব্রকলি খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভর্তি থাকে এবং মুখরোচক স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এ ছাড়া ব্রকলিতে থাকা অন্যান্য পুষ্টি সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং কাজ করার এনার্জি জোগায়। এনার্জি বেশি থাকলে কায়িক পরিশ্রমও করতে পারবেন, যার জেরে ক্যালোরি পুড়বে। এ ছাড়া ব্রকলি খেলে মেটাবলিক রেটও বাড়ে, যা ওবেসিটির ঝুঁকি কমায়। এই সবজির গ্লাইসেমিক সূচকও কম। তাই ব্রকলি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে এবং ওজন কমানোও সহজ হয়।
ক্যানসার আটকানোর ক্ষমতা: যদিও কোনও একটা ‘সুপারফুড’ নেই যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। আবার, ক্যানস্যারের জন্য ডায়েটকে বিশেষভাবে দায়ীও করা যায় না। তবে, একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট কিন্তু ক্যানস্যারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ব্রকলির একটি মূল উপাদান হলো সালফোরাফেন। এটি একটি ফাইটোকেমিক্যাল, যা ব্রকলির সামান্য তেতো স্বাদের জন্যও দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে যে সালফোরাফেন একটি নির্দিষ্ট ক্যানস্যারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: ব্রকলিতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস, লুটিন এবং জেক্সানথিন যা বয়সজনিত চোখের রোগ যেমন ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমাতে পারে। ব্রকলিতে বিটা-ক্যারোটিনও থাকে, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। যার ঘাটতি রাতকানা রোগের জন্য দায়ী।
হরমোনের ভারসাম্য: ব্রকলির মতো ব্রাসিকা শাকসবজিতে ইন্দোল-৩-কার্বিনল (I3C) নামে একটি উদ্ভিজ্জ যৌগ থাকে। এটা উদ্ভিজ্জ ইস্ট্রোজেন হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরে এটা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। I3C এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলাদের উভয়েরই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি: সালফার সমৃদ্ধ হওয়ায়, ব্রকলি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ সংক্রমণের বিরুদ্ধে আপনার ইমিউনিটিকে উন্নত করে। এর কারণ হলো সালফার গ্লুটাথিয়নের উৎপাদনে সাহায্য করে। যা অন্ত্রের ভেতরের আর বাইরের সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম।
এভাবেই ব্রকলি আমাদের শরীরের বিভিন্ন দিকের উন্নতিতে সাহায্য করে। আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্রকলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়েটে ব্রকলি যোগ করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন