কোন দেশ কোন খাবার দিয়ে নতুন বছর শুরু করে
নতুন বছর শুরু করার সময় প্রত্যেক দেশেই কিছু বিশেষ রীতি ও ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সংস্কৃতি নতুন বছরের প্রথম দিনে নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ করে, যা তাদের জন্য সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং সুখের প্রতীক। আসুন দেখে নিই কোন দেশ কোন খাবার দিয়ে নতুন বছর শুরু করে।
১. স্পেন: আঙুর
স্পেনে নতুন বছরের শুরুতে ১২টি আঙ্গুর খাওয়ার রীতি রয়েছে। প্রতিটি আঙ্গুর ১২ মাসের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই আঙ্গুরগুলো খেলে বছরজুড়ে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।
২. জাপান: সোবা নুডলস
জাপানের মানুষ নতুন বছরে "তোশিকোশি সোবা" নামে এক ধরনের নুডলস খায়। লম্বা এই নুডলস দীর্ঘ জীবন এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক।
৩. আমেরিকা: কালো মটরশুঁটি ও কর্নব্রেড
আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে কালো মটরশুঁটি, কর্নব্রেড এবং সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার রীতি প্রচলিত। কালো মটরশুঁটি সৌভাগ্যের প্রতীক, কর্নব্রেড সোনালী সমৃদ্ধির এবং সবুজ শাক-সবজি আর্থিক উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।
৪. ফিলিপাইন: গোলাকার ফল
ফিলিপাইনের মানুষরা নতুন বছরে বিভিন্ন ধরনের গোলাকার ফল খায়, যেমন কমলা ও আঙুর। গোলাকার আকৃতি মুদ্রার প্রতীক, যা আর্থিক সমৃদ্ধির আশা নিয়ে আসে।
৫. ইটালি: লেন্টিল ও সসেজ
ইটালিতে লেন্টিল খাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে, কারণ এর আকৃতি মুদ্রার মতো দেখতে। এটি আর্থিক সমৃদ্ধির প্রতীক। এ ছাড়াও, সসেজ খাওয়া হয় যা ভালো স্বাস্থ্যের প্রতীক।
৬. চীন: ডাম্পলিংস ও ফিশ
চীনে ডাম্পলিংস এবং ফিশ খাওয়ার রীতি প্রচলিত। ডাম্পলিংসকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, আর মাছ সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে।
৭. ব্রাজিল: পানীয়
ব্রাজিলে সামাজিকভাবে ইউরোপীয় প্রভাব অনেকটাই বেশি। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজদের মতো তাই এখানেও নববর্ষের ১২টি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে ১২টি আঙুর বা আনারদানা খাওয়া হয়। এ ছাড়া নববর্ষের দিন চাল-ডাল থাকে সবার খাবার টেবিলে।
স্প্যানিশ ও পর্তুগিজদের মতো তাই ব্রাজিলেও নববর্ষে আঙুর খাওয়া হয়।
কারণ, তাদের ধারণা চাল ও ডাল অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতীক। এ ছাড়া এদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে বিভিন্ন রকমের ফলের রস দিয়ে তৈরি ককটেলসহ পানীয় পান করা হয় সাম্বা নাচের তালে তালে সমুদ্রসৈকতে।
৮. গ্রীস: বাসিলোপিটা
গ্রীসে একটি বিশেষ কেক তৈরি করা হয়, যাকে "বাসিলোপিটা" বলা হয়। এই কেকের মধ্যে একটি মুদ্রা লুকিয়ে রাখা হয়। যিনি সেই মুদ্রা পান, তার জন্য বছরটি সৌভাগ্যময় হবে বলে মনে করা হয়।
৯. কোরিয়া: তেওকগুক স্যুপ
কোরিয়ায় চালের গুঁড়া দিয়ে ভাপে বানানো হয় রাইস কেক। এই রাইস কেক মাংস, ডিম, সামুদ্রিক শেওলা ও সবজি দিয়ে বানানো সুস্বাদু তেওকগুক স্যুপ নববর্ষের দিন পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াটাই কোরীয় রীতি।
১০. জার্মানি: শূকরের পা ও লেবুর রিং
জার্মানিতে শূকরের পা এবং লেবুর রিং খাওয়া হয়। শূকর সৌভাগ্যের প্রতীক, আর লেবুর রিং চক্রাকার জীবনের ধারাবাহিকতার প্রতীক। এ ছাড়া চিনি ও বাদাম দিয়ে তৈরি ‘সুগার পিগস’ খেয়েও নতুন বছরকে বরণ করেন জার্মানির অধিবাসীরা।
১১. মেক্সিকো: টামালেস
কলাপাতায় মোড়া এক বিশেষ ধরনের খাবার খেয়ে মেক্সিকোতে শুরু হয় বর্ষবরণ উৎসব। ‘টামালেস’ নামের এই খাবারে থাকে কর্ন, মাংস, পনিরসহ আরও কিছু আইটেম। এক ধরনের স্যুপের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় এই খাবার।
মেক্সিকোর নববর্ষ উদযাপনের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে রোসকা ডি রেস নামের এক ধরনের কেক বা রুটি। এতে বিভিন্ন ফলের মোরব্বা, গুঁড়া করা চিনি ও কিশমিশ দেওয়া থাকে।
১২. আর্জেন্টিনা: বিনস
আর্জেন্টিনার খাদ্যতালিকায় এমনিতেও বিনস বা বিভিন্ন ডালজাতীয় খাবারের প্রাধান্য রয়েছে। অর্থকরী রবিশস্য হিসেবে আর্জেন্টাইন সমাজে তাই বিনসের আছে আলাদা কদর।
নববর্ষের দিনে আর্জেন্টিনার সবাই বিনস–জাতীয় খাবার শখ করে খান। তারা বিশ্বাস করেন, এতে তাদের জীবন ও জীবিকায় আসবে উন্নতি, আসবে প্রাচুর্য।
নতুন বছরের এই খাবারগুলোর পেছনে প্রতিটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস লুকিয়ে রয়েছে। এই ঐতিহ্যগুলো কেবল খাবার নয়, বরং মানুষকে একত্রিত করে এবং নতুন বছরের জন্য ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।
আরটিভি/ জেএম
মন্তব্য করুন