ঢাকা

নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকার

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯ , ০৮:৩৯ পিএম


loading/img
ছবি: ইন্টারনেট

বিশ্বে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নাক ডাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবয়স্ক ৪০ শতাংশ পুরুষ এবং ২০ শতাংশ নারী ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন । প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপিনিয়ায় ভুগে থাকেন। এটি অতি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক অসুস্থতা। যারা অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপিনিয়ায় ভোগেন তাদের শ্বাস ১০ সেকেন্ড বা এরও বেশী সময় আটকে থাকে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ  কমে যায় ।

বিজ্ঞাপন

নাক ডাকার কারণ

জিহ্বা, মুখ এবং গলার ওপরের অংশের মাসেলগুলো শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশি। এ মাংসপেশিগুলো আমাদের খাওয়া, কথা বলা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ঘুমানোর সময় বাতাস চলাচলের রাস্তা বা এয়ারওয়ে খোলা রাখতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

সুতরাং জিহ্বা, মুখ এবং গলার ওপরের অংশের মাংসগুলো যখন দুর্বল থাকে, তখন মাংসগুলো শ্বাসনালীর ওপরে চাপ সৃষ্টি করে। শ্বাসনালীর ওপরে চাপ পড়ার ফলে বাতাস ভেতরে যেতে পারে না। অর্থাৎ শ্বাস যাওয়ার রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। তখন আমরা স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকায় ভুগে থাকি।

নাক ডাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ওজন বৃদ্ধি অর্থাৎ ওবেসিটি। যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তারা নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপিনিয়ায় বেশী ভুগে থাকেন। কেননা, ওজন বেশী হওয়ার কারণে শ্বাসনালীর আশেপাশে অনেক ফ্যাট বা চর্বি জমা হয় যা শ্বাসনালীর রাস্তা সরু করে দেয়। ফলে বাতাস যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

গবেষকরা বলছেন যারা স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকেন তাদের ব্লাড প্রেসার, কার্ডিওভেসকুলার সমস্যা (যেমন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলর, ডায়াবেটিকস, ঘাড় ব্যথা এবং মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা)  বেশি থাকে।

বিজ্ঞাপন

নাক ডাকা সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে যেভাবে

বিজ্ঞাপন

স্ট্রেদেনিং এক্সারসাইজ বা মায়োফাংশনাল থেরাপির মাধ্যমে আমরা স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে পারি। যেহেতু আমাদের মুখ, জিহ্বা এবং গলার ওপরের মাংস দুর্বল থাকে সেহেতু এসব মাংসগুলো শক্তিশালী করতে হবে। জিহ্বা, চোয়ালের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নাক ডাকার সমস্যা দূর হতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত এক্সারসাইজ করে আমাদের প্র্যাকটিসের রোগীরা নাক ডাকা রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

১. শ্বাস স্বাভাবিক রেখে জিহ্বা দিয়ে চিন বা থুতনি স্পর্শ করুন। তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ধরে রাখার সময় ১০-১৫ বার মনে মনে সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি পড়ুন। এ এক্সারসাইজ ১০ বার করুন। সবগুলো এক্সারসাইজ করার সময় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস রাখুন।

২. জিহ্বা দিয়ে নাক স্পর্শ করতে হবে। অথবা মাথা উঁচু করে জিহ্বা দিয়ে নাকস্পর্শ করার চেষ্টা করুন। তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ধরে রাখার সময় ১০-১৫ বার মনে মনে সুবহানআল্লাহি ওয়াবি হামদিহি পড়ুন বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন । এ এক্সারসাইজ ১০ বার করুন । ৩. ইনডেক্স ফিংগার ব্যবহার করে মুখের মধ্যে হাত দিয়ে চোয়াল বাইরের দিকে টানুন। তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ধরে রাখার সময় ১০-১৫ বার মনে মনে পড়ুন- সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন।  এ এক্সারসাইজ ৫-৭ বার করুন এবং উভয় দিকে করুন।  ৪. মুখের ভেতরে বাতাস নিয়ে অর্থাৎ মুখ ফুলিয়ে ধরে রাখুন ১০ সেকেন্ড। ধরে রাখার সময় ১০-১৫ বার মনে মনে পড়ুন- সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন।  এ এক্সারসাইজ ৫-৭ বার করুন এবং উভয় দিকে করুন। এরপর ধীরে ধীরে বাতাস ছেড়ে দিন। এ এক্সারসাইজ ৫ বার করুন ।

ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে নাক পরিষ্কার করতে হবে। হালকা গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করুন ৫ বার। অবশ্যই এক্সারসাইজগুলো সঠিক নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত করতে হবে ।

উপদেশ

১. চিৎ হয়ে শোয়া যাবে না। যেকোনো এক পাশে কাত হয়ে শুতে হবে।

২.ওজন কমাতে হবে (যদি ওজন বেশী থাকে)।

৩.ধূমপান বর্জন করুন।

৪. অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন। 

৫. প্রচুর পানি পান করুন।

 

লিখেছেন

প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার

মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ

ডি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |