পানির পাম্প বিশাল একটা দালানের নীচে থেকে সবচেয়ে ওপরের অংশে পানি সরবরাহ করে। আমাদের দেহে হৃদপিণ্ড নামের জরুরী অঙ্গটি ঠিক সেই কাজটিই করে। পায়ের আঙ্গুল থেকে মাথা পর্যন্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। পানির পাইপ লাইনে পানির ময়লা জমলে, পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ঠিক তেমনি আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরাতে ময়লা জমলে, রক্ত সঠিকভাবে চলতে পারে না।
রক্তের ময়লার নাম Atherosclerosis। এই Atherosclerosis (রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বি বা fat) তৈরি হয় দেহের তুলনায় অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাবার, মাদক দ্রব্য, ধূমপান থেকে।
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে, হৃদপিণ্ডর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। তখন হৃদপিণ্ড সারা দেহে সঠিকভাবে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। পরিণামে তৈরি হয় হৃদপিণ্ডের নানাবিধ অসুখ। যা কখনোই কাম্য নয়।
হৃদপিণ্ডের অসুখের জন্য দায়ী বিষয়গুলো হলো:
১) অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অক্লান্ত পরিশ্রম।
২) ভয়ানক দুশ্চিন্তা।
৩) বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশী।
৪) দীর্ঘ বছর সঠিকভাবে ঘুমের অভাব।
৫) কোনও ওষুধের দীর্ঘ বছরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৬) অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।
৭) কিডনি ফেইলার।
৮) মাদক দ্রব্য সেবন ও অতিরিক্ত ধূমপান।
৯) পারিবারিক ইতিহাস।
১০) কোনও জটিল রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে যেভাবে
---------------------------------------------------------------
হার্ট ভালো রাখার জন্য আমাদের করণীয় :
১) বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২) অতিরিক্ত মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার, মাদক দ্রব্য, ধূমপান পরিহার করতে হবে।
৩) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪) জীবন মানেই একটার পর একটা যুদ্ধ। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত নিজেকে খুশী রাখা উচিত।
৫) ধর্মের কাজ, মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি দেয়। হার্ট ভালো রাখার জন্য মানসিক প্রশান্তি ভীষণ জরুরী।
৬) পারিবারিক ইতিহাসে হার্টের অসুখ থাকলে, আগে থেকেই সচেতন হোন।
৭) হার্টের অসুখ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ফলোআপে থাকাটা ভীষণ জরুরী।
৮) প্রতি বছর পুরো দেহের চেকআপ করান। আমাদের দেহ বিশাল এক কারখানা। একটা মেশিন দুর্বল হলে, আশপাশের মেশিনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন।
৯) অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাবেন। নিয়মিত দুই লিটার পানি ভীষণ জরুরী। অতিরিক্ত তেল, মশলা, চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিলেই ভালো।
১০) সুযোগ হলেই হাঁটবেন। খোলা আকাশ এর নীচে হাঁটতে পারলে, খুব ভালো হয়। সুযোগ না থাকলে ঘরের কাজগুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করবেন (ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া ............)। এতে ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাড়তি ক্যালোরিগুলো ঝরে যায়। যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ।
১১) সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
১২) সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা, হার্টের জন্য ভালো। তবে হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন।
১৩) হতাশা দূর করতে নিজেকে সৃষ্টিশীলতা ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রাখবেন। ভালো কাজ আমাদেরকে দেয় আত্মতৃপ্তি। মন ভালো থাকলে, হার্ট ভালো থাকবে। হার্ট ভীষণ জরুরী অর্গান। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও আমাদের হৃদস্পন্দন (heart beat) সচল থাকে । হার্টবিট থেমে গেলে, আমাদের জীবনটাও থেমে যাবে।
আমাদের সবার উচিত হার্ট ভালো রাখার উপায়গুলো মেনে চলা এবং অন্যদের সচেতন করা।
ডাঃ ফারহানা মোবিন,
চিকিৎসক ও লেখক।