গরমের আরাম ঘোল
বাঙালী জীবনের সঙ্গে বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে আছে ঘোল। প্রচলিত কথা আছে 'দুধের সাধ ঘোলে মেটাই'। ঘোল একাধারে দুধের গুণাগুণ সমৃদ্ধ কিন্তু দুধের চেয়ে ফ্যাট কম। এই দুগ্ধজাত খাবারকে কোথাও কোথাও লাচ্ছি বলি। যাদের দুধ হজম করতে সমস্যা, অর্থাৎ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তারাও সহজে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, মিনারেল সমৃদ্ধ ঘোল খেতে পারেন। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকায় তা হজম করাও সহজ।
উপকারিতা
ভারতীয় ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলেন, ‘দই খেতে সকলে পছন্দ নাও করতে পারেন। ছোট বাচ্চারাও অনেক সময়ে দুধ বা দই খেতে চায় না। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হলেও দুধ খাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তাদের দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে সুস্বাদু ঘোল বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যে কোনো মৌসুমে শরীরে লিকুইড ইনটেক বেশি হওয়া দরকার, বিশেষত গরমে। প্রত্যেকের রোজ যতটা পানি খাওয়া দরকার, ততটা হয়তো অনেকেই খান না। সে ক্ষেত্রে বাটারমিল্ক বা ঘোল কিন্তু খুব ভালো সমাধান। এতে শরীর প্রয়োজনীয় তরলও পেল, ক্যালরিও পেল, পুষ্টিও হলো। কিছু কিছু রোগ যেমন, রেনাল ডিজিজের ক্ষেত্রে, ফ্লুয়িড ইনটেক কম হওয়া দরকার, সে ক্ষেত্রে বাটারমিল্ক না খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিক রোগী যখন খাবেন, তখন চিনি মেশানো উচিত হবে না।
- ঘোল হজমেও বিশেষ সাহায্য করে। খুব বেশি রসুন, পেঁয়াজ বা অন্যান্য মশলা সহযোগে রান্না খাবার খাওয়ার পর অনেক সময় পেটে সমস্যা দেখা দেয়। এই জাতীয় খাওয়াদাওয়ার পর এক গ্লাস ঘোল খেলে তা হজমে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন দুর্বলতা কাটাতে বা অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর।
- যাদের হজমের সমস্যা, ঘোল তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকায়, তা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে ও হজমে সাহায্য করে। আদা, গোলমরিচের গুঁড়ো বা জিরা মিশিয়ে যখন ঘোল বানানো হয়, তখন তাতে হজমে সহায়ক উপাদান থাকে। এই উপাদান পেটে গ্যাসের সমস্যা সমাধানে কাজে দেয়।
- দই, লবণ ও নানা মশলা সহযোগে কখনও কখনও ঘোল বানানো হয়। এতে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধেরও ক্ষমতা রয়েছে। ইলেকট্রোলাইটিসে পরিপূর্ণ বলে তাপ থেকে বাঁচতে ও শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করতে পারে এই পানীয়। শুধু ডিহাইড্রেশন নয়, গরমে র্যাশ, ঘামাচি, দুর্বলতা- এ সব ক্ষেত্রেও ঘোল খুব কার্যকরী। শরীর ঠাণ্ডা রাখতেও কিন্তু ঘোলের ভূমিকা রয়েছে।
- বাড়িতে সুস্বাদু ঘোল বানানোও খুবই সহজ। এক কাপ টক দই, দু’কাপ ঠাণ্ডা পানি, একটি কাঁচা মরিচ, সামান্য আদা, এক টেবিলচামচ কুচানো ধনেপাতা, হাফ চা চামচ জিরা গুঁড়া, স্বাদমতো বিট লবণ ও সাধারণ লবণ, সামান্য চাটমশলা একসঙ্গে মিশিয়ে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। তার পর গ্লাসে ঢেলে উপরে ধনে পাতা বা পুদিনা পাতা ছড়িয়ে দিন। এটা খেতে যেমন ভালো, তেমনই শরীরও রাখবে ঠাণ্ডা।
সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা।
জিএ / এমকে
মন্তব্য করুন