গ্রীষ্মকালে বাজারে গেলে তরমুজ, আম, বাঙ্গি, লিচু, কাঁঠালসহ নানা ধরনের মৌসুমি ফলের দেখা মেলে। এছাড়াও পাওয়া যায় আপেল, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আঙুর, ড্রাগনের মতো অন্যান্য ফল। এসব ফল শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে বাজারে ফল কিনতে গিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন—ফলটি কি ফরমালিনমুক্ত? কারণ আমাদের দেশে শুধু ফলেই নয়, অনেক খাবারেই ফরমালিন মেশানো হয়। যার ফলে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।
ফরমালিন মূলত একটি সংরক্ষণকারী রাসায়নিক, যা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংস করে এবং পচন ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ফল, শাকসবজি, মাছ-মাংস দীর্ঘ সময় তাজা রাখার জন্য এই ক্ষতিকর পদার্থটি ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পুষ্টিবিদ ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, ফরমালিন আসলে একটি রাসায়নিক দ্রবণ—যার ৪০ শতাংশ হলো ফরমালডিহাইড এবং এতে মিথানলও থাকে। এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ ফরমালিন কেবলমাত্র প্রোটিনজাতীয় খাবারের সংরক্ষণে কার্যকর, অথচ ফলমূল ও শাকসবজি মূলত কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার জাতীয়।
ফরমালিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এর সবচেয়ে বড় শিকার। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দিতে পারে বিভিন্ন জটিলতা।
- ফরমালিনে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে পেটব্যথা, হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, ত্বকের রোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, ফলে চোখের স্থায়ী সমস্যা হতে পারে।
- ফরমালিন ধীরে ধীরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন—কিডনি, যকৃত, পাকস্থলী, এমনকি চোখও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- গর্ভবতী মায়েরা যদি ফরমালিনযুক্ত খাবার খান, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর বিকলাঙ্গতা বা শারীরিক প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বাড়ে।
প্রতিদিন আমরা নিজের অজান্তেই শরীরে বিষ গ্রহণ করছি। তাই সচেতন থাকা জরুরি। ফরমালিনমুক্ত খাবার বেছে নেওয়া, ঘরে এনে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া এবং সম্ভব হলে বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনাকাটা করাই নিরাপদ।
আরটিভি/জেএম