ঢাকারোববার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

রক্ষক না হয়ে সুর ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়: আইন উপদেষ্টা

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ , ০৪:৪৮ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি লিখেছেন, ‘রক্ষক না হয়ে তিনি (এস কে সুর) ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারেই ব্যাংকটির সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর রাখা ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ৭০ লাখ টাকার এফডিআর ও প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের এক কেজি স্বর্ণের অলংকারও সেখান থেকে জব্দ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, রোববার বেলা ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুদক পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকে উপস্থিত হয়। এরপর লকারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে মিটিং সম্পন্ন হয়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান নাটকীয়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকেই অবস্থান করে দুদক প্রতিনিধি দল। দীর্ঘ সময়েও তারা সুরের ব্যক্তিগত লকার খুলতে পারেননি। এরপর রাত ৯টার দিকে তারা লকার খুলতে সক্ষম হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পরিচালক (উপসচিব) কাজী সায়েমুজ্জামান জানান, রোববার সকাল থেকে লকার খোলার অভিযান শুরু হয়। পরে রাতে লকার খুলতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে এস কে সুরের নামে থাকা তিনটি বক্স থেকে বেশ কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা মালামালের মধ্যে রয়েছে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ৭০ লাখ টাকার এফডিআর এবং এক হাজার ৫ দশমিক ৪ গ্রাম স্বর্ণালংকার। জব্দকৃত মালামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

গত ১৪ জানুয়ারি এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট টিম রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুদকের নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে গত ১৯ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এস কে সুরের বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দের সময় তার নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভল্ট থাকার তথ্য পায় দুদক। পরে সংস্থাটি জানতে পারে, সেটি ভল্ট নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যবান সামগ্রী রাখার লকার (সেফ ডিপোজিট)। ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা থেকে দুদককে ফিরতি চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর স্থগিত করার তথ্য জানায়।

বিজ্ঞাপন

গত ২৩ ডিসেম্বর এস কে সুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সম্পদের বিবরণী নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়। আলোচিত পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে তাকে দুদকে তলব করা হয়। এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, হলমার্কের এই ঋণ কেলেংকারির সময় সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই মামলার ঘটনা সংক্রান্তে সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বিশেষ প্রয়োজন মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজতি আসামি সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী/২০১৫) এর ৪ ধারা মামলায় পুনঃগ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তুষার আহমেদ ও আসলাম উদ্দিন উভয়েই হল-মার্ক গ্রুপের কর্মচারী ছিলেন। তুষার আহমেদের বক্তব্য অনুসারে তিনি হল-মার্ক গ্রুপের জিএম (কমার্শিয়াল) হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন এবং বেতন রেজিস্ট্রারের রেকর্ডও তা সমর্থন করে। আসলাম উদ্দিন তুষার আহমেদের আগে থেকেই হল মার্ক গ্রুপে চাকরি করেন। অনুসন্ধানকালে গৃহীত তার বক্তব্য অনুসারে তিনিও ২০১১ সালে জিএম হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর হল-মার্ক গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়েছেন অল্প কিছুদিন।

তার আগে তাদের বেতন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। হল-মার্ক গ্রুপে চাকরীকালীন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে তুষার আহমেদ ও আসলাম উদ্দিনের যৌথ নামে ঢাকা ব্যাংক, আসলাম উদ্দিনের একক নামে ঢাকা ব্যাংক ও তুষার আহমেদের একক নামে ঢাকা ব্যাংক প্লাটিনাম হিসাব পরিচালিত হয়েছে। এ অবস্থায় আসামি তুষার আহমেদ, মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন, সুমন ভূঁইয়া অপরাধলব্ধ ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক লেয়ারিং করে অবৈধ উৎস গোপন করার অপরাধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারা তৎসঙ্গে পঠিতব্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৯ এর ৪ ধারায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।

আরটিভি/এফএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |