সোরিয়াসিস ত্বকের একটি জটিল চর্মরোগ। এ রোগে ত্বক থেকে মাছের মতো আঁশ উঠতে থাকে ও আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে যায়। এসব আঁশ হচ্ছে মূলত ত্বকের মৃতকোষ। কনুই, হাঁটু ও মাথার ত্বকে এ চর্মরোগ বেশি হয়। এ রোগের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে চুলকানি।
সোরিয়াসিসের তীব্রতা বাড়াতে পারে এমন কিছু খাবারের তালিকা-
দুগ্ধজাত খাবার: ফুল ফ্যাট দুধ-দই সোরিয়াসিসের প্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে। এর পরিবর্তে লো ফ্যাটের দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে খেয়াল করুন ত্বক কী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
চিনিযুক্ত সিরিয়াল: দইয়ের মতো স্বাস্থ্যকর সোরিয়াসিসের অবস্থা আরো খারাপ করতে পারে। এর কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত চিনি।
অতিরিক্ত ঝাল: অতিরিক্ত ঝাল সোরিয়াসিসকে উত্ত্যক্ত করতে পারে। কাঁচা মরিচ ও মরিচের গুঁড়ার ব্যবহার সীমিত করুন। এ মসলা অতিরিক্ত খেলে দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক প্রদাহ সৃষ্টি হবে।
টমেটো: কিছু ফল ও সবজিকে নাইটশেড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ পরিবারের কিছু সদস্য হচ্ছে টমেটো, মরিচ, বেগুন ও সাদা আলু। কিন্তু অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন যে নাইটশেড পরিবারের ফল-সবজি খাওয়ার পর তাদের উপসর্গের তীব্রতা বেড়ে গেছে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
গ্লুটেনযুক্ত খাবার: আমেরিকার ন্যাশনাল সোরিয়াসিস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, প্রায় ২৫ শতাংশ সোরিয়াসিস রোগীর গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতাও রয়েছে। সোরিয়াসিসের উপসর্গের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডায়েট থেকে গ্লুটেনযুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে দূর করুন।
মাংস: যাদের সোরিয়াসিস আছে, তাঁদের লাল মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে। যদি লাল মাংস খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়, তাহলে তারা চর্বিহীন গরুর মাংসের পাতলা অংশ খেতে পারেন। সাদা মাংস যেমন- মুরগির মাংস খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
বেশি লবণের খাবার: চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো এটিও শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে। সোরিয়াসিসকে ডিস্টার্ব করতে না চাইলে যে খাবারে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ ব্যবহার করা হয়েছে তা পরিহার করুন।
খাদ্য তালিকায় যা যা রাখবেন-
বাদাম: বাদামে উচ্চমাত্রার হেলদি পলিআনসেচুরেটের ফ্যাট থাকে। এক মুঠো বাদাম আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।
ফল ও সবজি: সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি রাখুন। জাম, গাজর, লেবু কমলায় শুধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই থাকে না, বরং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি থাকে। এসব ভিটামিন বাহ্যিকভাবে সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রসুন: রসূনে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আছে, যা সোরিয়াসিস নিরাময়ে কাজ করতে পারে। রসূনে লাইপোক্সিজেনাস ইনহিবিটর থাকে, যা প্রদাহের জন্য দায়ী এনজাইময়ের কাজকে বাধা প্রদান করে।
ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, প্রতিদিন গোসল করুন, বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান পরিহার করুন, নির্দিষ্ট শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং ত্বকে অনেক জোরে জোরে ঘষাঘষি করা থেকে বিরত থাকুন।
আভ্যন্তরীণভাবে সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর ও ব্যালেন্স ডায়েট মেনে চলুন, ব্যায়াম করুন এবং ঘুমের সঠিক সময়সূচি মেনে চলুন।
ডা. মৌসুমী আফরিন ইভা
নিউট্রিশন কনসালটেন্ট, ডায়াবেটলজিষ্ট ও ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস, মালিবাগ ঢাকা