ঢাকাবুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জার্মানির ভিসা জটিলতায় হুমকিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫:৫৯ পিএম


loading/img

ভিসা জটিলতার কারণে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ১৬-১৭ মাসেও দেশটিতে পৌঁছাতে পারেননি। এতে তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা শিক্ষার্থীরা। ফলে এ জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান জার্মানে অধ‍্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, জার্মান দূতাবাসের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, জার্মানির ভিসা পেতে গড়ে ১৭ থেকে ১৮ মাস লাগে যাচ্ছে। এতে করে শিক্ষাবর্ষের বেশির ভাগ সময়ই দেশে বসে অপচয় হচ্ছে। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যায়। কিন্তু জার্মান অ্যাম্বাসির মতো অবহেলা হয়তো আর কোন অ্যাম্বাসি করে না উল্লেখ করে, শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারি থেকে লকডাউন ও বিভিন্ন অজুহাতে জার্মান অ্যাম্বাসি নিয়মিত কাজ থেকে দূরে সরে যায়। পরবর্তীতে এসব ঝামেলা মিটলেও কমেনি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ মাস।

ইতোপূর্বে জার্মান অ্যাম্বাসি থেকে বিভিন্ন আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার দেখা মেলেনি। নানান সময়ে নানান অজুহাতে তারা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার ‘German Visa & Higher Studies Solution For Bangladeshi Students’ নামক ফেসবুক গ্রুপের উদ্যোগে টুইটারে এ নিয়ে আন্দোলন করার পরেও তেমন কোনো উন্নতি আসেনি। বরং দিনের পর দিন ভোগান্তি বাড়ছে।

ইউএস অ্যাম্বাসিতেও শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যা থাকার কারণে তারা ‘সুপার ফ্রাইডে’ নামক একটি প্রোগ্রামের উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে একদিনে ৬০০ শিক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। সে তুলনায় জার্মানি গমনরত শিক্ষার্থী অনেক কম থাকা সত্ত্বেও এই ব্যাকলগ থেকে বের হতে পারছে না জার্মান অ্যাম্বাসি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে কিছু কোর্স দিলেও সামনের সেমিস্টার থেকে সেসব কোর্স অনলাইনে বন্ধ হয়ে যাবে। প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এডমিশন লেটার পেয়েও অ্যাম্বাসির এই ভোগান্তির কারণে সঠিক সময়ে যেতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

অনলাইন ক্লাস করা শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন খুব শিগগিরই তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কারণ, অন্য সব দেশের অবস্থানরত জার্মান এম্বাসি ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে যাওয়াতে তারা সঠিক সময়ে জার্মানিতে পা রাখতে পারছেন, কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না।

এ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে সেই উত্তরও অ্যাম্বাসি দিতে পারছে না৷ শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশ করে, একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের সমস্যা তুলে ধরলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো দিনের পর দিন অবস্থা আরও বেগতিক হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা হতাশা আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে।

জার্মানির টেকনিসের হোসচুলে ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রামের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র জিলানী হোসেন বলেন, মহামারির পর জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে ১৭ থেকে ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা ক্লাস করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে ক্লাসে যোগ না দিলে ভর্তি বাতিল করা হবে।

তিনি আরও বলেন, জার্মান দূতাবাস ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ১২ মাস উল্লেখ করলেও বাস্তবে সময় লাগছে ২০-২৪ মাস। ফলস্বরূপ, ২০২১ সালের ২ জুলাইয়ের পরে, জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ৭০০ টিরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেষ হওয়ার পথে।

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার জন্য ১০ হাজার ৫২১ ইউরো বা প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্লক জমা দিতে হয়। এ ছাড়া সেমিস্টারের আবেদন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হবে। ভিসা জটিলতার কারণে ভর্তি বাতিল হলে আমাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হবে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ের কবলে পড়বে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |