কাক খুব দ্রুত উড়তে পারে।
সে পানকৌড়ির চেয়ে দ্রুত উড়ে গেল।
বকের চেয়ে উঁচুতে উড়ে গেল।
কাক সারা বিশ্বে উড়তে লাগল।
সে প্রাচ্যে উড়ে গেল।
এরপর পাশ্চাত্যে উড়ে গেল, এরপর গেল দক্ষিণে।
কিন্তু তিনি কখনো উত্তরের দিকে যায়নি। পিঁপড়ে তাকে বারণ করেছিল, সে যেন উত্তরে যাওয়ার চেষ্টা না করে।
পিঁপড়ে বলেছিল, ‘উত্তর দিকে খুব ঠান্ডা।’
আসলেই উত্তর পিঁপড়ে, কাকের বা যে কোনো প্রাণীর জন্য খুব ঠান্ডা ছিল।
কিন্তু কাক বারণ শুনল না। কারণ তার যা ভালো লাগে তাই করে।
ওই রাতেই কাক উত্তর কোরিয়া যাত্রা করে। সেখানে পৌঁছাতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। কারণ সে খুব দ্রুত উড়তে পারে।
সূর্য ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাক পাইন গাছের পাশে থামল।
সে যেদিকেই তাকাল শুধু বরফ আর বরফ।
গাছে বরফ।
মাটিতে বরফ।
আর পাহাড়ের চূড়ায় তুষারপাত।
একটি প্যাঁচা খুব ধীরে ধীরে তার কাছে এলো।
প্যাঁচা বলল, ‘ওহহ... হ্যালো। শীতের প্রস্ততি নাও। রাত বাড়ছে। এখানে অনেক ঠান্ডা।’
কাক শুনল না, কারণ তার যা ভালো লাগে তাই করে।
রাতে ঘুমাতে কাক উড়ে পাইন গাছের ডালে বসল। পেঁচাটিও একই ডালে উড়ে এলো।
পেঁচা বলল, ‘তোমার তো অনেক শীত লাগবে, বরফে জমে যাবে। তাই আমার বাসায় চলো।’
কাক এবারও শুনল না। কারণ তার যা ভালো লাগে তাই করে।
কাক পাতার ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ল। সম্ভবত এত দূর উড়ে এসে সে খুব ক্লান্ত ছিল।
কাক রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘুমাল। জেগে উঠে ভাবল, বাসায় ফিরে পিঁপড়াকে ভ্রমণের কথা বলবে।
কাকা উড়তে দুই ডানা ঝাপটালো। কিন্তু, পারল না। পরিবর্তে সে বরফের মধ্যে পড়ে গেল। সে আবার ডানা ঝাপটানোর চেষ্টা করল। এবারও তার ডানা কাজ করল না। কারণ বরফ জমে সেগুলো শক্ত হয়ে গেছে। সে কাউকে ডাকার চেষ্টা করল। কিন্তু, মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।
কাক রোদের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু, কোনো লাভ হয়নি। রোদের তাপ বাড়তে বাড়তে যখন দুপুর হলো তখন তার ডানা একটু শক্তি পেল। কিন্তু, বাসায় ফিরতে কয়েক দিন সময় লাগল। কারণ ডানাগুলো খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।
যখন সে ঘরে ফিরল তখন ডানাগুলো একটু একটু কাজ করছে। কিন্তু, সে এখনো ডাকতে পারছে না। এতো কাকের জন্য মহামুশকিল। কাক দুই ঠোঁট খুলে বারবার ডাকার চেষ্ট করল। একসময় তার মুখ দিয়ে কা কা শব্দ বের হলো। যা বনের কেউ আগে কখনো শোনেনি। সবাই কাকের দিকে তাকাল। সে যতবারই ডাকার চেষ্ট করল প্রতিবারই কা কা শব্দ বের হলো। কাক পরে উড়তে পারলেও আর কথা বলতে পারল না। সে কিছু বললেই কা কা হয়ে যায়। তাই সেই ভ্রমণের কথা আর বন্ধু পিঁপড়াকে বলাও হলো না কাকের। এখনো কাক ডাকলেই কা কা শব্দ হয়।
লেখক: শিশু সাহিত্যিক, ছড়াকার ও সাংবাদিক